রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেসবুক ব্যবহারে নির্দেশনা মানছেন না সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কূটনীতিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেসবুক ব্যবহারে নির্দেশনা মানছেন না সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কূটনীতিক

বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন দেশে কর্মরত কূটনীতিকদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মানছেন না। তাদের অনেকেই সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মকান্ডে র বিরুদ্ধে নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। অন্যের স্ট্যাটাসে কমেন্ট বা মন্তব্য করছেন। যা সরকার এবং সরকারের কর্মকা কে বিব্রত ও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সরকার কিংবা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কিংবা এ ধরনের কেউ ফেসবুকে কোনো স্ট্যাটাস দিলেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে মুহূর্তের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে। মামলা, গ্রেফতার পর্যন্ত করেছে- এমন ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি বরগুনায় সন্ত্রাসীরা এক যুবককে তার স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য এবং এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়। এ ঘটনায় নয়ন বন্ড নামে এক আসামি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেক দফা আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ ক্রসফায়ারের বিরোধিতা করেন। এই বিরোধিতার তালিকায় রয়েছেন সরকারের এক কূটনীতিকও। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি দেশে কর্মরত এই কূটনীতিক গত ২ জুলাই তার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে অনেকে কমেন্ট করেন। ওইসব কমেন্টের জবাবও দেন ওই কূটনীতিক। একজনের জবাবে তিনি স্পষ্ট লিখেন, তিনি মনে করেন এটি ‘একটি হত্যাকা ’। তার এই স্ট্যাটাস এবং কমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন মহলে এখন তুমুল আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, ওই কূটনীতিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও সরাসরি সরকারের কর্মকান্ডে র বিরোধিতা করছেন, যা তার চাকরির শর্ত লঙ্ঘনের শামিল। অনেকে বলছেন, সরকারি কর্মচারী এবং কূটনীতিক হওয়ার কারণে সরকার তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই জায়গায় অন্য কেউ হলে কিংবা সাধারণ কোনো নাগরিক ফেসবুকে এরকম স্ট্যাটাস দিলে এতক্ষণে তাকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করা হতো। এটি আইনের দুই রকম ব্যবহার বলেও মনে করেন অনেকে। শুধু ওই কূটনীতিকই নন, সরকারির কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, সরকারি চিকিৎসক, সরকারি স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেকেই তাদের ফেসবুক ওয়ালে নানারকম স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। যা সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। অনেক সময় তারা নানাভাবে সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে র বিরোধিতা করে কৌশলে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। ওই নীতিমালা অনুসরণ করেই তাদের ফেসবুক ব্যবহার করার কথা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এর ব্যত্যয় ঘটছে অহরহ।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেদার ফেসবুক ব্যবহার শুরু করলে এবং নিজেদের ওয়ালে ইচ্ছামতো নানান স্ট্যাটাস দিলে সরকারের নানা কর্মকা  প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করে। তখন আলোচনায় আসে বিষয়টি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবেন কি না- তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই নির্দেশিকায় ফেসবুক ব্যবহারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সতর্কতার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

ওই নির্দেশিকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কর্মচারীদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ করা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা আছে নির্দেশিকাটি সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, সংস্থা, কমিশন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি, মাঠ পর্যায়ের অফিস, শিক্ষা/প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

ওই নির্দেশিকায় বলা আছে, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনার সময় তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, মেনে চলতে হবে কিছু অনুশাসন। এ ছাড়াও মন্তব্য করার বিষয় বেছে নেওয়া এবং বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ট্যাগিং করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা ওই নির্দেশনার নয় নম্বরে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- কোন কোন বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। এর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না; কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থী কোনো কনটেন্ট; জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিষয়; রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো কনটেন্ট; বাংলাদেশে বসবাসকারী কোনো ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক বিষয়বস্তু; কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো বিষয়বস্তু এবং লিঙ্গ বৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো বিষয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই নির্দেশিকা অনেকেই মানছেন না। ব্যক্তিগত আইডিতে নিজের পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা কমেন্টের ক্ষেত্রে তারা নির্দেশনাটি অমান্য করছেন।

সর্বশেষ খবর