রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মামলা-সংশ্লিষ্ট কেউ বিচারকের ফেসবুক বন্ধু হবেন না

আসছে নীতিমালা

আরাফাত মুন্না

মামলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ফেসবুক-টুইটার তথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন না বিচারকরা। বিচারিক কর্মঘণ্টা পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে অফিস সময়ে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো মন্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে বিচারকদের। এমন সব নির্দেশনাসহ বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের (বিচারক) জন্য আসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নীতিমালা। এরই মধ্যে এ নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতি খসড়াটির ব্যাপারে মতামত ও তা চূড়ান্ত করার জন্য ‘স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস’-এর কাছে পাঠিয়েছেন। এ কমিটি খসড়াটি চূড়ান্ত করার পর প্রধান বিচারপতি অনুমোদন দেবেন। এর পরই তা কার্যকর হবে। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিচারকদের জন্য এ ধরনের নীতিমালা তৈরি জরুরি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ও এর ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকা উচিত উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, নীতিমালার নির্দেশনা অমান্য করলে তা ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজ্ঞরাও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারকরাও সাধারণ মানুষ। তাই তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বিচারকরাও যদি সাধারণ মানুষের মতো নানা রকম মন্তব্য ও ছবি প্রকাশ করেন, তাহলে তাতে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। এতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হবে। তাই এ ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে, এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।

যা পরিহার করতে হবে বিচারকদের : খসড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের তথ্য বা মন্তব্য প্রচার ও প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই পরিহার করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। সে বিষয়গুলো হচ্ছে- জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো ধরনের মন্তব্য, কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো মন্তব্য বা তথ্য, রাজনৈতিক মতাদর্শ আলোচনা-সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য বা মন্তব্য, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয়প্রতিপন্নমূলক কোনো তথ্য, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে কোনো তথ্য, লিঙ্গবৈষম্যমূলক কোনো তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করা যাবে না; জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো তথ্য, কোনো মামলার রায় বা আদেশ প্রদানের পর কোনো বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তার ওই মামলা-সংক্রান্ত অনুভূতি এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার পরিহার করতে হবে।

ছবি প্রচার ও প্রকাশে যেসব বিষয় অনুসরণ করতে হবে : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও গুরুত্বের সঙ্গে নির্বাচন ও বাছাই করতে হবে। তথ্য ও উপাত্তের যথাযথ ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

খসড়ায় আরও যা বলা হয়েছে : অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য দেওয়া যাবে না। আইনগত বিষয়ে আলোচনার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম থাকতে পারে, যেখানে ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতীত কেবল আইনগত বিষয়ে আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান হতে পারে। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ও নাগরিকসুলভ আচরণ ও অনুশাসন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তথ্য আদান-প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মামলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। অপ্রয়োজনীয় তথ্যে অপরকে সংযুক্তকরণ, আদান-প্রদান, প্রচার ও প্রকাশ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও তাদের পূর্বানুমতি ব্যতীত প্রকাশ ও প্রচার করা যাবে না। এ ছাড়া বিচারিক কর্মঘণ্টা পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত যে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে।

সর্বশেষ খবর