সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

অর্থ পাচারে বাংলাদেশকে সতর্ক করল এপিজি

প্রতিনিধি দল ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত দিতে ফিলিপাইনের ওপর চাপ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক সংস্থা এশীয়-প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি)। সংস্থাটি বলছে, কোনো দেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়মকানুন পুরোপুরি পরিপালন করলে এ টাকাটা বাইরে যেত না। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে ফিলিপাইনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়মকানুন পরিপালনে বেশ দুর্বলতা রয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে যেসব সন্দেহজনক লেনদেন হয়ে থাকে সেগুলোও মানি লন্ডারিংয়ের  মতোই অপরাধ। ফলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানি লন্ডারিং হতে পারে এমন সব জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মনিটরিং আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে।

ঢাকা সফররত এপিজির একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সচিবালয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের নিয়মিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, স্বরাষ্ট্র, এনবিআর, ব্যাংকিং বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ বর্তমানে এপিজির কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছে। ২০২০ সালের এপিজির বার্ষিক সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকালের বৈঠকে তার প্রস্তুতির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিলিপাইন সদস্য দেশ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এপিজি চাপ প্রয়োগ করবে। কারণ বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন দুই দেশই এপিজির সদস্য-রাষ্ট্র। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এপিজির প্রতিনিধি পরিচালক ডেভিড শ্যানন ও মোস্তফা আকবর অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে তারা বাংলাদেশকে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরতে সহায়তার আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ-সংক্রান্ত একটি অ্যাকশন প্ল্যান অনুমোদিত হয়েছে, যার কপি এপিজিকে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ চুরি নিয়েও তারা একটু আলাপ করেছে। এপিজি বলেছে, যেসব দেশে মানি লন্ডারিং বিষয়গুলো পুরোপুরি পরিপালন হয় না, সেসব দেশে (যেমন ফিলিপাইন) এগুলো বেশি হয়। যদি সে দেশে মানি লন্ডারিং বিষয়টা পরিপালন করা হতো, তাহলে টাকাটা বাইরে যেত না। এপিজির প্রতিটি দেশের জন্য যে কমন ক্রাইটেরিয়াগুলো রয়েছে, সেগুলো জাজ করতে গেলে মানি লন্ডারিং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ধরা পড়বে। এপিজির প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করবে।  সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলায় এপিজি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব সন্দেহজনক লেনদেন হয়ে থাকে, সেগুলোর ব্যাপারে মনিটরিং জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে এপিজি। সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে গত তিন বছরে এপিজি বাংলাদেশকে যেসব কর্মপরিকল্পনা দিয়েছিল বাংলাদেশ সেগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেছে বলে এপিজিকে অবহিত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর