সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
ওয়ারীতে শিশু সায়মার খুনি হারুন গ্রেফতার

ছাদ দেখাতে নিয়ে ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাদ দেখাতে নিয়ে ধর্ষণ

রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামে শিশু সামিয়া আক্তার সায়মার ধর্ষক এবং খুনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম হারুন অর রশিদ। শনিবার দিবাগত রাতে কুমিল্লার ডাবরডাঙ্গা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। হারুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। তিনি বলেছেন, ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে নিয়ে সায়মাকে ধর্ষণ করে হারুন। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণের সময় সামিয়া নিস্তেজ হয়ে যায়। মৃত ভেবে গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনেহিঁচরে রান্নাঘরে রেখে পালিয়ে যায়। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, দশ মিনিট গেলেই বাসায় এসে পড়তে বসতে চেয়েছিল মেয়ে। মেয়েটি আর ফিরে আসল না। সায়মার মৃত্যুর পর বাসার কেউ খাবার খায়নি। সবাই সামিয়ার জামা কাপড় আর বই জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আমার পরীর মতো মেয়েকে যে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তার ফাঁসি চাই। তিনি আরও বলেন, যাদের মেয়ে বাচ্চা আছে, তারা আগলে রাখবেন। এক মুহূর্তের জন্য আড়াল হতে দেবেন না। এসব নরপিশাচের হাত থেকে খেয়াল রাখবেন।

আবদুল বাতেন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬টার দিকে সায়মা তার মাকে বলে ৮ তলায় যাবে। সেখানে ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি বাচ্চা আছে তার সঙ্গে একটু খেলেই চলে আসবে। প্রায় সময়ই ওই বাসায় গিয়ে বাচ্চার সঙ্গে সায়মা খেলত। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায়, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটে সায়মার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ দেখানোর নাম করে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে সায়মার মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। ধস্তাধস্তিতে সায়মা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সায়মা নিস্তেজ দেখে গলায় রশি পেঁচিয়ে সায়মাকে টেনে রান্নাঘরে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে হারুন গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে ঢাকায়  আনে। আবদুল বাতেন বলেন, ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের খালাতো ভাই হারুন। পারভেজের রঙের দোকানে কাজ করে আসছিল হারুন। পারভেজ জুলাই মাস থেকে হারুনকে দোকানে কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছিল। কারণ প্রতি সপ্তাহে কাউকে না বলে বাড়িতে চলে যেত। তারপরও খালাতো ভাই হওয়ায় কয়েকদিন ওই বাসায় ছিল। এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ধর্ষণে অভিযুক্ত হারুনকে মিডিয়া সেন্টারের সামনে দিয়ে আদালতে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তুলতে হাঁটিয়ে  নিয়ে যাচ্ছিল ডিবি পুলিশের একটি দল। তখন সাধারণ জনতা হারুনকে উদ্দেশ করে গালাগাল করে। বিক্ষুব্ধ কয়েকজন এই নরপিশাচকে মারতে যায়। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে দ্রুত চলে যায়। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নয়তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভিতরে সায়মাকে মৃত উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের ছয়তলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত সামিয়া। বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরের একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। সে ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলে নারসারিতে পড়ত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর