মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা কাদের সিদ্দিকীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা কাদের সিদ্দিকীর

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী। সংসদ নির্বাচনের পর থেকে কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার এ ঘোষণা দেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী এই সাত মাস ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্রন্ট জাতীয় কোনো সমস্যার কথাই জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। এ অবস্থায় দেশের জনগণের প্রকৃত পাহারাদার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বসে থাকতে পারে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জনসম্পৃক্ত কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জনগণকে পাশে নিয়ে নতুন উদ্যমে পথচলা শুরুর অঙ্গীকার করেন তিনি। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার এ ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের অফিসে একটি অসমাপ্ত বৈঠক ছাড়া নির্বাচনের পর কখনো কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কোনো মিটিং হয়নি। এর ফলে মনে হচ্ছে, কোনোকালে কখনো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে বাংলাদেশে কখনো কোনো রাজনৈতিক জোট ছিল না বা গঠিত হয়নি। তিনি বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর গুম, খুন এবং সর্বস্তরের মানুষের ওপর যেভাবে নির্যাতন চলছে তাদের পাশে দাঁড়ায়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব ড. কামাল হোসেনের দেওয়ার কথা ছিল। বিগত সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল বিএনপির গুলশান কার্যালয় থেকে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতৃত্ব ড. কামাল নয়, বিএনপির কাছেই রয়ে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবীর আরও বলেন, নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করছি। কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব দিতে অনীহা রয়েছে। নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জনগণের সঙ্গে থাকতে পারেনি। তাই সার্বিক বিবেচনায় তাদের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন তার নেতৃত্বে দেওয়া হয়নি। এমনকি মনোনয়নের কাজগপত্রও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়নি। তা দেওয়া হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে। এতে বোঝা যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের পর ড. কামাল হোসেনের প্রয়োজন ছিল সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করা। এটাই ছিল জাতির প্রত্যাশা। কিন্তু তা না করায় সমগ্র জাতি হতাশ হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, এখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই। সত্য কথা বলতে কি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। এর কোনো কর্মকা  নেই। সেজন্য সেখান থেকে আমরা চলে আসছি, বের হয়ে যাচ্ছি বা আমাদের নিজেদেরই প্রত্যাহার করছি, এ শব্দগুলো ব্যবহারের কথা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। সেজন্য তাদের অস্তিত্ব খোঁজার কথা কিংবা তাদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার কথা বলেছি। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রথমে বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া মিলে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হলেও গত বছরের ৫ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

সর্বশেষ খবর