বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

কিছু ওসি ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করেন : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করেন- এমন মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, তাদের কার্যক্রম থেকে মনে হয় তারাই সর্বেসর্বা। ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের আবেদনের শুনানির সময় গতকাল বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মোয়াজ্জেমের পক্ষে আইনজীবী আহসান উল্লাহ ও সালমা সুলতানা। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী আহসান উল্লাহ বলেন, মোয়াজ্জেমের মোবাইল থেকে ভিডিওটি এক সাংবাদিকের হাতে চলে যায়। সেখান থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়েছে। তখন আদালত বলে, সাংবাদিকদের হাতে ভিডিওটি আগে গেলে তাকে (নুসরাত) মরতে হতো না। মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলে, যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেটিতে সাজার মাত্রা কম, অপরাধটি জামিনযোগ্য এবং তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে তার চিকিৎসা দরকার বলেই জামিন আবেদন করা হয়েছে। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, তার পেনশনের একটা বিষয় আছে। আদালত তাকে জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। আদালত বলেন, অপরাধের সাজা বেশি না কম তা বড় কথা নয়। তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি গুরুতর। মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, তিনি বয়স্ক। কানে সমস্যা, কম শোনেন। আদালত তখন বলেন, তিনি কানে কম শুনলে ?ওসি হিসেবে থাকেন কীভাবে? আদালত আরও বলে, সাংবাদিকরা শুরু থেকেই এ ঘটনার পেছনে লেগে থাকলে এ ধরনের ঘটনা (নুসরাতের মৃত্যু) ঘটত না। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। ব্যারিস্টার সুমনও সমাজের দর্পণ। মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, সরকারি চাকরি যারা করেন, তারাই জানেন তাদের কী কষ্ট। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সরকারি অফিসার হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী মেসেজ যাবে? তিনি অসুস্থ থাকলে কারা কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তারাই তাকে চিকিৎসা করাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজনারস সেলে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ অফিসারদের এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখিনি। মেয়েটিকে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছে তা শোনার উপযোগী নয়। তখন আদালত বলে, কিছু কিছু অফিসার নিজেদের জমিদার মনে করে, সবাই কিন্তু না। কিছু কিছু অফিসার এমন আছে। অনেক দেশেই এমন আছে, তবে আমাদের দেশে বেশি। আদালত বলে, মেয়েটি (নুসরাত) থানায় অভিযোগ করতে গেল। এজাহারের জন্য তাকে লিখিত বক্তব্য দিতে বললেই হতো। সেখানে এসব প্রশ্নের কোনো দরকার হয়? ওসির প্রশ্নগুলোর কোনো প্রসঙ্গ দেখি না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে কোনো প্রেক্ষাপট কাজ করছে? এসব প্রশ্ন করে মজা করবে আবার ভাইরাল করবে? একেবারেই দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে। আদালত বলে, ঘটনা শুনে তার (ওসি) সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল। তখন মেয়েটিকে নিরাপত্তা দেওয়া হলে ঘটনাটি এতদূর এগোত না।

সর্বশেষ খবর