বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা দ্রুত ফেরাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

রোহিঙ্গা দ্রুত ফেরাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকায় গতকাল আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বান কি মুন

রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরার পথ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দুই দিনব্যাপী জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ)’-এর ঢাকা বৈঠকে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুততম সময়ে তারা (রোহিঙ্গা) নিজ দেশে ফেরত যাক। তারা যত তাড়াতাড়ি নিজেদের দেশে ফিরে যাবে, ততই তা হবে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল।’ খবর বাসসের। ঢাকা বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা সি হেইন, গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং সম্মেলনের কো-চেয়ার ও বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা। সম্মেলনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সামনের সারিতে থেকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাবউদ্দিনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সচেতন থাকতে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্লোবাল কমিশন অব অ্যাডাপটেশনের সহযোগিতায় আমরা জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সঠিক অভিযোজন কৌশলের পাশাপাশি সাশ্রয়ী পন্থা ও ঝুঁকি নিরসন ব্যবস্থার সুবিধা পেতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে অনুষ্ঠেয় ক্লাইমেট চেঞ্জ সামিটের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর জন্য। ওই সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশসমূূহ ও বাংলাদেশর পক্ষ থেকে আমাকে বক্তব্য দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’ বাংলাদেশে একটি ‘রিজিওনাল অ্যাডাপটেশন সেন্টার’ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোজন প্রক্রিয়ায় অগ্রগামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি রাখে। আমি বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করতে আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি শুধু নিজের দেশ নিয়ে ভাবি না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে অনেক ছোট দ্বীপপুঞ্জ হারিয়ে যাবে। তখন সেখানকার মানুষেরা কোথায় যাবে, সে কথাও আমাদের ভাবতে হবে।’ শেখ হাসিনা তার ভাষণে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, ‘তাদের আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের কারণে আমাদের ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ওখানে আমাদের যত পাহাড়ি এলাকা বা জঙ্গল ছিল, সেগুলো কেটেছেঁটে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে এলাকাটা অনেকটা অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।’ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘এ জন্য আমরা চাই দ্রুততম সময়ে তারা নিজ দেশে ফেরত যাক। তারা যত তাড়াতাড়ি নিজেদের দেশে ফিরে যাবে, ততই তা হবে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল।’

দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, জাতিসংঘের বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ও সম্ভাবনা, ২০১৯ প্রতিবেদনে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে সবচেয়ে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ১০টি দেশের মধ্যে (৭ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী) বাংলাদেশ একটি। এই ১০টি দেশের তালিকায় এশিয়া অঞ্চলে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে, রপ্তানি এবং প্রবাস আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমন পরিবেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সামনের দিনগুলোতে আরও বেগবান হবে।

 আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

সংসদ নেতা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, এপ্রিল-২০১৯-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধির সমান। এই তালিকায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রথম স্থানে আছে রুয়ান্ডা, যার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

সর্বশেষ খবর