বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা

আলোচিত ও বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে। মামলায় সিনহার বিরুদ্ধে ফারমার্স ব্যাংকের ভুয়া ঋণের মাধ্যমে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে গতকাল কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেনÑ ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট  স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, গুলশান শাখার ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার শ্রীহরিপুরের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, ধনবাড়ির যদুনাথপুরের নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, ওই এলাকার রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় সিমি।

দুদকের তথ্য মতে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় পৃথক দুটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়াতে পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বাড়িটির মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রণজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়।  রণজিৎ-সান্ত্রী দম্পতি বিচারপতি সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ। দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম এবং মামলায় আসামি করা ব্যাংক কর্মকর্তারা কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন বিচারপতি সিনহার নামে মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়। দুদক জানিয়েছে, আসামি রণজিৎ চন্দ্র সাহা ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রণজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণগ্রহীতা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা এবং অপর ঋণগ্রহীতা শাহজাহান ও রণজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। ঋণগ্রহীতা দুজনই অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ। তারা কখনো ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি, তাদের কোনো ব্যবসা নেই। বিচারপতি সিনহা ও রণজিৎ চন্দ্র সাহার মাধ্যমে তাদের ভুল বুঝিয়ে ব্যাংকের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়। এই ভুয়া ঋণের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা চার কোটি টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। মামলায় বলা হয়, বিচারপতি সিনহা নিজে লাভবান হওয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় ওই ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে অন্যের নামে ভুয়া ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেছেন।

সর্বশেষ খবর