রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের ক্ষতি বরদাস্ত নয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের ক্ষতি বরদাস্ত নয় : প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের ক্ষতি বরদাস্ত করা হবে না বলে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা এত খেটে, সারাদিন এত কাজের পর যদি দুর্নীতির কারণে সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়, সেটা হবে খুব দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। মনে রাখবেন, কেউ ঘুষ নিলেই শুধু সে অপরাধী হবে তা নয়, যে দেবে সেও অপরাধী।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাপলা হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত বার্ষিক ‘কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ২০১৯’ উপলক্ষে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষে সিনিয়র সচিব ও সচিবরা ২০১৯-২০ অর্থবছরের কর্মসম্পাদন চুক্তিতে সই করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে চুক্তিপত্র তুলে দেন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা প্রধানদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার ফলেই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ আপনাদের কাজের সুফল পাচ্ছে। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের কাজের ফলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে, মাথা পিছু আয় বেড়েছে। দেশ এগিয়ে যাওয়া এবং মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়ার ফলেই আজ আমরা ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমি মনে করি, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমেছে এবং আমাদের কাজে গতিশীলতা বেড়েছে, দক্ষতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে কাজের আগ্রহটাও বেড়েছে।

জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ তুলে সরকার প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। তারপরও বাংলাদেশে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। এটা ধরে রাখতে হবে। মানুষের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অত্যন্ত সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কোন মন্ত্রণালয়ে কার কী কাজ বা এখানে শুধু সরকার প্রধানের সঙ্গেই নয়, তাদের নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগ এবং একেবারে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কাজটা কী হবে, তার একটা দিকনির্দেশনা সবাই পাচ্ছেন। কর্মসম্পাদন চুক্তির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিকভাবে একেবারে বিভিন্ন স্তর পর্যন্ত চলে যাওয়াতে আজকে তার চমৎকার ফলাফল পাচ্ছি এবং দেশটা দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যখন নেন, স্বাভাবিকভাবে সেই মন্ত্রণালয়ের কী কী কাজ বা কীভাবে কোন কাজটা করলে দেশটা আরও উন্নত হতে পারে বা দ্রুত কাজগুলো বাস্তবায়ন করে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে পারি, সেটা আপনাদের চিন্তা করতে হবে, ভাবতে হবে। এটা একটা বিরাট দায়িত্ব। এই দায়িত্বটা আপনারা যথাযথভাবে পালন করবেন।

মুজিব বর্ষ উদযাপনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশে একটা ভিক্ষুকও থাকবে না। একটা মানুষ গৃহহারা থাকবে না। একটা মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না। অন্তত মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘ পরিকল্পনা ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে আমরা সবসময় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আগামী ২১ এবং ৪১ সালকে সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত একটি দেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সারা দেশে বন্যা চলছে। এ বন্যা পাহাড়ি, হাওর বা একটু উচু অঞ্চলে আছে। এ পানিটা ধীরগতিতে নেমে এলে নিম্ন অঞ্চলগুলো প্লাবিত হবে। এ জন্য আপনারা সাবধান থাকবেন। তিনি প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বন্যায় মানুষের যেন প্রাণহানি না ঘটে এবং খাদ্যের জন্য মানুষ যেন কষ্ট না পায়। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মালেক বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে তাঁর মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বক্তৃতা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে র ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

সর্বশেষ খবর