রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও অ্যান্টিবায়োটিক মিলল দুধে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষাতেও বাজারের ১০টি দুধের নমুনার সব কটিতে বিপজ্জনক অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক ও ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এবং তার সহগবেষকরা। প্রথম দফায় পাওয়া গিয়েছিল তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক। এবার মিলেছে চারটি। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন তিনি। এদিকে দুধ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে গবেষক দল নানা ধরনের কটূক্তি ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জানান, পাঁচটি কোম্পানির  সাতটি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের নমুনা এবং খোলা দুধের তিনটি নমুনা একই জায়গা থেকে সংগ্রহ করে তিনি ও তার সহকর্মীরা দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা করেছেন। তাতে ১০টি নমুনার ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। কোনো নমুনায় চার ধরনের, কোনোটিতে তিন, আবার কোনোটিতে দুই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক মিলেছে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হচ্ছে- অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও লেবোফ্লক্সাসিন। এদিকে দুধ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে গবেষক দল নানা ধরনের কটূক্তি ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে দুধের মান নিয়ে অনড় আ ব ম ফারুক। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পারলে পাল্টা গবেষণা করে প্রমাণ করে দিক দুধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই। হুমকি-ধমকি কোনো সমাধান নয়। গভীর রাতে আমার সহগবেষকদের ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সচিবালয়ের এক বড় কর্মকর্তা ও কোম্পানিগুলো অভব্য ভাষায় কথা বলছেন। তারা এটা বুঝতে চাইছেন না বিষয়টা সারা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। তারাও এর কুফল থেকে বাইরে নন।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক মেশানো খাদ্য গ্রহণ করলে ওই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর মানবশরীরে কাজ করবে না। ওষুধে কাজ না করলে চিকিৎসক বিভ্রান্ত হবেন। অন্য রোগ ভেবে ওষুধ বদলাবেন অথবা আরও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন। এটা ভয়াবহ ব্যাপার। তখন সাধারণ সংক্রমণ থেকেও মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এ ছাড়া নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারে গবেষণা হচ্ছে না। ফলে বাজারের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো প্রতিরোধী হয়ে গেলে চিকিৎসাব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেবে।’ এর আগে, ২৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত দুধের নমুনায় মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কথা জানান আ ব ম ফারুক। তবে ‘এই গবেষণা ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রটোকল মানা হয়নি’ এমন অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন। এমনকি ওই গবেষণার সঙ্গে বিভাগের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ২ জুলাই দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা চালান অধ্যাপক ফারুক। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা পরীক্ষাটি পুনরায় সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও একই জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা করা হয়। এবারও সব নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে।’ অধ্যাপক ফারুক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা অনুভব করে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এ পরীক্ষা করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট টাকা নিয়ে এটা করেছি এবং সরকারের ভেজালবিরোধী কর্মকা কে সহযোগিতার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্যে এসব নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা এসব খাদ্য তৈরি করছেন তাদের অনুমোদন বাতিল করা উচিত।’ এর আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন এই গবেষণায় প্রটোকল মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘পিআর রিভিউস জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার আগেই ওই গবেষক তার তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।’ এ বিষয়ে আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব গবেষণাগুলো জার্নালে ছাপা হতে গেলে কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর লেগে যাবে। এই সময়ে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। তত দিন কি আমরা বসে থাকব? আমরা ভালোভাবেই জানি কোনটা পিআর রিভিউতে দেওয়া দরকার আর কোনটা দরকার নয়।’

সর্বশেষ খবর