মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
জেলা প্রশাসক সম্মেলন

শিল্পে বিদ্যুৎ গ্যাস সংযোগ প্রদানের সময় কড়াকড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নিউ মিডিয়া এবং এর চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। অনলাইন মিডিয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডিসিরা রাজস্ব আদায়ে জেলা-উপজেলায় কর কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। শিক্ষার মানোন্নয়নে ভালো বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের জবাবে ডিসিদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন বিভাগ, অর্থ, পরিকল্পনা, শিক্ষা, তথ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ মোট ১৫ বিভাগের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠক হয় ডিসিদের।

সকালে শুরুতেই ডিসিদের সঙ্গে কার্য অধিবেশন হয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগের। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে কার্যঅধিবেশনে জেলা প্রশাসকরা রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রতি জেলা-উপজেলায় কর কমিটি করার প্রস্তাব দেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, তাদের এই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পর্যালোচনার পর দেখা যাবে। ডিসিরা এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ ও একটি ব্যাংক চেয়েছেন- সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসিউর রহমান বলেন- বিষয়টি আজকের আলোচনায় আসেনি, গতকালই তারা এটি চেয়েছেন। তারা যে বিশেষায়িত ব্যাংকের কথা বলেছেন সে বিষয়েও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মসিউর রহমান বলেন, ডিসিরা জানিয়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন এনজিওর ঋণ প্রদানের বিষয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা যে রয়েছে তা নিরসনের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ডিসিদের বলেছেন, পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে কেউ কারখানা করলে তাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। এটা একদম স্পষ্ট। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলের বাইরে যারা কারখানা স্থাপন করে ফেলেছেন তারা সেগুলো পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে স্থানান্তর করতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল অনুশাসন দিয়েছেন- যত্রতত্র শিল্প এলাকা করা যাবে না। আজ আমরা সেই বার্তাই জেলা প্রশাসকদের স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। তিনি বলেন, এখন থেকে যারা এখানে শিল্প এলাকা করতে চাচ্ছেন বা শিল্প এলাকা করতে যাবেন বা করে ফেলেছেন, তাদের নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমাদের কথা হলো, সরকারের অনুমোদিত পরিকল্পিত শিল্প এলাকা ছাড়া কোথাও গ্যাসের সংযোগ, বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া যাবে না। অনুমোদন ছাড়া শিল্প করলে লাইন কেটে দেওয়া হবে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রি-পেইড মিটার নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কিছু সমস্যার কথা ডিসিরা জানিয়েছেন। সেগুলো আমরা দেখব। বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে শিগগিরই একটি নীতিমালা করা হচ্ছে বলেও ডিসিদের জানিয়েছেন তিনি।

এ অধিবেশনে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মুজিববর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান দেওয়ার প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর আওতায় ১৬ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে। কাজ যাতে ঠিকমতো এগোয়, সেজন্য তা মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থাপনাগুলো সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইতিপূর্বে নির্মাণ করা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ৩৪২টি স্থাপনা সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণের কাজ চলমান আছে। জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ কর্মস্থলে এগুলোও মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়, সে বিষয়ও মনিটরিং করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশনে অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ঢাকায় বা বেশ কিছু জায়গায় অত্যন্ত ভালো কিছু বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোর অনেক সুনাম রয়েছে, সেখানকার শিক্ষকদের বিষয়ে অনেক সুনাম রয়েছে। ডিসিদের একটা প্রস্তাব আছে তাদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে। আমরা ডিসিদের বলেছি- খুব কম খরচে টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খুব ভালো ভালো শিক্ষকদের ভালো ভালো ক্লাসগুলোকে কিন্তু আমরা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একইসঙ্গে সব স্কুলে দেখাতে পারি। সেজন্য একটা শিক্ষা টিভি জাতীয় কোনো কিছু চিন্তা করা যায় এবং সেটি করা গেলে হয়তো যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষক আছেন, তারা অন্যদের শেখানোর পদ্ধতি থেকে উপকৃত হবেন এবং একই সঙ্গে শিক্ষার্থীও যে যেখানেই থাকুক, একই মানের শিক্ষকদের শিক্ষাদান, পাঠদানে তারা উপকৃত হবে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, শিক্ষা টিভির বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব এবং আগামী দিনে কী পরিকল্পনা করা যায় সেটি দেখব।

দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় সংগীত গাওয়া, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাসহ যত বিষয় শিক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, যেখানে ডিসিদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছি।

তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, নিবন্ধন পেতে আট হাজারেরও বেশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদন করেছে। যারা সত্যিকার অর্থে অনলাইন হিসেবে কাজ করে তাদের সহসাই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হবে।

কার্যঅধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনে অনলাইন মিডিয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বিষয় আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, আট হাজার অনলাইন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু যৌক্তিক সে প্রসঙ্গটুকু অবশ্যই আসে। আমরা এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেগুলো আসলে প্রয়োজন আছে, যেগুলো অনলাইন হিসেবে সত্যিকার অর্থে কাজ করতে পারবে বা করার সক্ষমতা রাখে বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে দরখাস্ত করা হয়নি সেগুলোকে আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনব।

এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, আট হাজার আবেদন তো, যাচাই-বাছাই করতে একটু সময় লাগবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব আমরা যাচাই-বাছাই শেষ করে নিবন্ধনের আওতায় আনব। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নিউ মিডিয়ার যে চ্যালেঞ্জ, সোশ্যাল মিডিয়ার যে চ্যালেঞ্জ, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ নয়, এটি পুরো পৃথিবীতেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি ইউরোপে চ্যালেঞ্জ, নর্থ আমেরিকাসহ সব দেশেই এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আরেকটি প্রসঙ্গ এসেছে জেলায় জেলায় তথ্য ভবন নির্মাণ করা। তথ্য ভবনের সঙ্গে যাতে একটি মিলনায়তন থাকে, যেখানে অনুষ্ঠান করা যাবে, সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি, ২৭টি জেলায় কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সব জেলায় করতে চাই, এজন্য ডিসিদের স্থান নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যাবল নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য যে আইন সেই আইন বাস্তবায়নে কদিন আগে থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। টেলিভিশনের ক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগে বিশৃঙ্খলা ছিল, বাংলাদেশে চ্যানেলের মধ্যে হঠাৎ করে বিদেশি চ্যানেল ঢুকে যেতে। ক্যাবল নেটওয়ার্ক যারা পরিচালনা করেন তাদের সঙ্গে সম্পর্কের আলোকে বা অন্য কোনো বিষয়ের আলোকে সিরিয়াল নির্ধারিত হতো। এখন সেখানে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মন্ত্রী জানান, ক্যাবল নেটওয়ার্কের অনিয়ম দূর করতে যে আইনের প্রয়োগ চলছে তা চলবে বলে ডিসিদের জানানো হয়েছে।

বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় দিনের শেষ কার্যঅধিবেশন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডিসিরা। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর