মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
রূপপুরের আবাসিক প্রকল্প

মিলেছে ৬২ কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকল্পে লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ৩৬ কোটি টাকা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। আর গৃহায়ণ অধিদফতরের তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে ৬২ কোটি টাকা লুটপাটের। দুই কমিটির প্রতিবেদনে ৫০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদন দুটিতে। গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করা দুই প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আগামী রবিবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রতিবেদন দুটি হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। বিভিন্নজনের বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে। প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সূত্রের মাধ্যমে প্রতিবেদনের সারাংশ বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে আসে। জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের আবাসিক প্রকল্পে প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর একটি বালিশ ফ্ল্যাটে তুলতে খরচ হয় ৭৬০ টাকা। গত মে মাসে এমন সংবাদে ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে হাই কোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায়, দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই ওই প্রতিবেদন আসার আগে আদালত যেন কোনো আদেশ না দেয়। পরে হাই কোর্ট দুই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনই আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল প্রতিবেদন দুটি জমা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চারটি ভবনের আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহ কাজের চুক্তি মূল্য ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অথচ মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে ৭৭ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার। অর্থাৎ চুক্তি মূল্য সরবরাহ করা মালামালের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা বেশি। তাই এই বাড়তি পরিশোধিত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি গণপূর্ত অধিদফতরের শিডিউল বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আসবাবপত্রের আইটেমের দর নির্ধারণ করে। কিন্তু দাফতরিক প্রাক্কলন প্রস্তুত, সুপারিশ, নিরীক্ষা এবং অনুমোদনকারী কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্যে দর নির্ধাণের ক্ষেত্রে গণপূর্ত শিডিউলের বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণের কথা বললেও বাস্তবে দেখা যায় তারা কিছু ফ্যাক্টরস যেমন, শ্রম, পরিবহন, সনড্রি এবং উঠানো বাবদ অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক মূল্য ধরেছেন। আসবাবপত্র পরিবহন এবং বিভিন্ন তলায় ওঠানো ও স্থাপন গণপূর্ত অধিদফতরের রেট শিডিউল-২০১৮ এর অন্তর্ভুক্ত থাকলেও তারা তা অনুসরণ করেননি। প্রতিবেদনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের নামের তালিকা কয়েকটি ভাগে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক্কলন প্রস্তুত ও প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হলেন- পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, মোস্তফা কামাল ও মো. তারেক, উপসহকারী প্রকৌশলী আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, মো. রুবেল হোসাইন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. ফজলে হক, সুমন কুমার নন্দী, মো. রফিকুজ্জামান, মো. জাহিদুল কবীর, মো. শাহীন উদ্দিন, মো. আবু সাঈদ ও মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রাক্কলন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুপারিশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হলেন- রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম জিল্লুর রহমান, পাবনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, পাবনা জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. রকিবুল ইসলাম, মোরশেদা ইয়াছবির, খন্দকার মো. আহসানুল হক, সুমন কুমার নন্দী ও মো. রওশন আলী।

প্রাক্কলন যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হলেন- রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবর রহমান ও মো. শফিকুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিনা শারমিন, মো. নুরুল ইসলাম (এলপিআর), মো. আশরাফুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী মো. মকলেছুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী শাহনাজ আকতার ও মো. আলমগীর হোসেন।

বিল প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হলেন- পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শফিউজ্জামান, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবীর, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রওশন আলী, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুজ্জামান, মো. তাহাজ্জুদ হোসেন ও মো. শফিকুল ইসলাম, আহম্মেদ সাজ্জাদ খান ও মোহাম্মদ মাসুদুল আলম।

বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ছয়জন কর্মকর্তা। এ ছাড়া দরপত্র প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও অনুমোদনের সঙ্গেও নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম জড়িত রয়েছেন। এর সঙ্গে আরও ছয় কর্মকর্তার নাম রয়েছে প্রতিবেদনে।

সর্বশেষ খবর