বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেমু ট্রেন না কিনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেমু ট্রেন না কিনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

দেশে নতুন করে ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) তথা ডেমু ট্রেন না কেনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কক্সবাজার শহর রক্ষায় ঝাউবন করা এবং প্রত্যেক উপজেলায় খোলা জায়গায় মিনি স্টেডিয়াম করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) ট্রেন চালুর ছয় বছর পর এটি চলাচল উপযোগী নয় বলে নতুন করে এই ট্রেন কেনার প্রস্তাব নাকচ হয়েছে একনেক সভায়। সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মো. নূরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক এবং ঢাকার মধ্যে শাটল ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ডেমু সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেমু চলাচল উপযোগী নয়। অন্য কোনো ট্রেন আমদানি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এর আগে কেনা ডেমু ট্রেনগুলো যাত্রীদের উপকারে আসেনি এবং অনেকগুলো নষ্ট হয়ে আছে। তাই নতুন করে এই ট্রেন কেনা হবে না। এ প্রকল্পটি পুনর্গঠন করে অন্য কোনো ট্রেন আমদানির নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত সকালের অফিস সময়ের ট্রেনটি বিরতিহীন করার নির্দেশও দেন শেখ হাসিনা। তবে পরের ট্রেনগুলোকে সব স্টেশনে বিরতি রাখতে বলেন তিনি। কক্সবাজারে ঝাউবন করার নির্দেশ : কক্সবাজার শহর রক্ষায় ঝাউবন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন বলেন, ঝাউবন থাকলে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এজন্য কক্সবাজার শহরকে রক্ষার জন্য ঝাউবন লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজারে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বিষয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, তাদের শহরের মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে আগে। তারপর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো উন্নতমানের হতে হবে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কক্সবাজারও একটি মাস্টারপ্ল্যান করবে। যেন যত্রতত্র বিল্ডিং না ওঠে। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা  চলছে। বিদেশিরাও বিনিয়োগ করছে এখানে। এর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলারও ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিনোদন ও শপিং মলের ব্যবস্থাও করতে হবে। সচিব জানান, ঢাকার রাস্তাঘাটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো, কাজগুলোর মান যেন ভালো হয়। প্রতি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের নির্দেশ : দেশের প্রতিটি উপজেলায় মিনি (ছোট) স্টেডিয়াম নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব নূরুল আমিন বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় এখন থেকে একটা মিনি স্টেডিয়াম হবে। সেটা কোনো কলেজ, মাদ্রাসা, স্কুলের মাঠে হতে পারবে না। একটা খোলা জায়গায় হতে হবে। প্রয়োজনে উপজেলা থেকে একটু দূরে হলেও চলবে। এর একদিকে গ্যালারি থাকবে। বাকি তিন দিক উন্মুক্ত থাকবে। সচিব বলেন, ছয়টি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যতগুলো আসবে, সেগুলো মিনি স্টেডিয়াম হিসেবে প্রস্তাব আনতে হবে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকবে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা : চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য টেলিযোগাযোগ ও উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগসহ সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করবে সরকার। এজন্য প্রায় ৬২ কোটি টাকায় ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে রিডাডেন্সিসহ উচ্চক্ষমতার ফাইবার অপটিক লিংক স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া আধুনিক সুবিধার টেলিকম এক্সচেঞ্জ স্থাপন করা হবে। উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিতে শক্তিশালী রাউটার, সুইচ, টেলিকম ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন ও টেলিযোগাযোগ স্থাপনের জন্য অফিস ভবনসহ টেলিকম কম্পাউন্ড নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা সচিব জানান, একনেক বৈঠকে এটিসহ পাঁচ হাজার ১৪২ কোটি ৬ লাখ টাকার ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে চার হাজার ১২৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এক হাজার ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার জোগান থাকবে। মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অবশ্যই শুরু করতে হবে। আমরা আর কতদিন এ বোঝা বহন করব? রোহিঙ্গাদের যত তাড়াতাড়ি প্রত্যাবাসন করা হবে, তা সবার জন্য হবে মঙ্গলজনক।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি-এনিক বুর্দিন গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলো বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে তাদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণসহ মিয়ানমারের ভিতরে কাজ করতে হবে। কক্সবাজারে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের সংখ্যা স্থানীয়দের সংখ্যা থেকে ছাড়িয়ে গেছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে।

জবাবে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত তার দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা এই ইস্যুতে শুরু থেকেই বাংলাদেশকে সহায়তা শুরু করেছি এবং এটি অব্যাহত থাকবে।’ তবে মারি-এনিক বুর্দিন বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারের অবস্থা রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার অনুকূল নয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন এবং বর্ধিত ট্রেন বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে আন্তনগর ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধন করবেন।

সর্বশেষ খবর