বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মামলা ডিআইজি মিজান ও দুদকের বাছিরের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা গতকাল দুদকের ঢাকার এক নম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। এ তথ্য দেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। মামলায় বলা হয়, ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের সময় অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়ে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন এনামুল বাছির। অন্যদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে এবং এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করতে তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন ডিআইজি মিজান। জানা গেছে, মামলায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ, বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও পারিপার্শ্বিক বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। দুদক বলছে, গত ১৫ জানুয়ারি এনামুল বাছিরকে বাজারের ব্যাগে করে আনা ২৫ লাখ টাকা দেন ডিআইজি মিজান। এর আগে এ নিয়ে রমনা পার্কে তারা আলোচনা করেন। শাহজাহানপুরে মিজানের কাছ থেকে টাকার ব্যাগটি গ্রহণ করে বাছির নিজ বাসায় চলে যান। ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজান একটি শপিং ব্যাগে করে আনা ১৫ লাখ টাকা এনামুল বাছিরকে দেন। এ নিয়ে তারা রমনা পার্কে আলোচনা করেন। পরে শান্তিনগরে মিজানের কাছ থেকে টাকার ব্যাগটি নিয়ে এনামুল বাছির চলে যান। এ বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া বাছির তার ছেলের স্কুল যাতায়াতের জন্য মিজানের কাছে একটি গাড়ি দাবি করেন। এ বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বিভাগীয় তদন্ত টিমের কাছেও বক্তব্য দিয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এসেছে, মিজান ও বাছির অন্যের নামে কেনা দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে পরস্পরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগসহ এসএমএস বিনিময় করেছেন। মিজানের ভাষ্যমতে তিনি সিমসহ বাছিরকে একটি স্যামসাং মোবাইল সেট কিনে দেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই সিমটি একটি স্যামসাং মোবাইলে ব্যবহার করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি মোবাইল ও সিমটি মিজানের বডিগার্ড হৃদয় হাসানের নামে কেনা হয়। যোগাযোগ রাখার জন্য ১০ জানুয়ারি মোবাইল ও সিম বাছিরকে দেন ডিআইজি মিজান। অন্যদিকে ডিআইজি মিজানও তার অর্ডারলি সাদ্দাম হোসেনের নামে কেনা সিম দিয়ে বাছিরের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতেন। দুদক বলছে, ডিআইজি মিজান অসদুদ্দেশ্যে ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে এনামুল বাছিরের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনসংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ এবং পরে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে ৯ জুন একটি টেলিভিশনে অভিযোগ করেন ডিআইজি মিজান। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে বাছির দাবি করেন, তার কণ্ঠ নকল করে ডিআইজি মিজান কিছু বানোয়াট রেকর্ড একটি টেলিভিশনকে সরবরাহ করেছেন। অভিযোগ ওঠার পর ১২ জুন বাছিরকে সরিয়ে দুদকের আরেক পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজান, তার স্ত্রী, ভাই ও ভাগ্নের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এদিকে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানে ফানাফিল্যাকে প্রধান করে তিন সদস্যের দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই দলের প্রধান গতকাল মামলা করেন। এর আগে মামলার অনুমোদন দেয় দুদক।

সর্বশেষ খবর