বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

পিছু ছাড়ছে না জাপার গৃহবিবাদ

কাদের চেয়ারম্যান নন : রওশন, নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই : কাদের

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

গৃহবিবাদ পিছু ছাড়ছে না সদ্যপ্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতে। সোমবার মধ্যরাতে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের প্যাডে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান নন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এদিকে গতকাল জি এম কাদের রওশন এরশাদের বিবৃতিকে উড়ো চিঠি বলে মন্তব্য করে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কর্মকা  পরিচালনা করছে। এইচ এম এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দল পরিচালিত হচ্ছে। নেতৃত্বের প্রশ্নে জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দেবর-ভাবীর এমন টানাপড়েনে অস্থিরতায় ভুগছে জাপার নেতা-কর্মীরা।

পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এরশাদের জীবদ্দশাই পাঁচবার ভাঙনের মুখে পড়ে দলটি। তারপরও এরশাদের কৌশলী রাজনীতির কারণে তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিই ছিল শক্তিশালী। এরশাদের চারটি জানাজায় মানুষের উপস্থিতি পার্টিকে আরও শক্তিশালী করেছে। এই অবস্থায় রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় আর জি এম কাদের দল পরিচালনা করলে পার্টি আরও শক্তিশালী হতে পারে। পূরণ হতে পারে প্রয়াত এরশাদের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো। আর এরশাদের অবর্তমানে নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে পার্টিতে ফাটল ধরলে সংগঠনটি প্যাড সর্বস্ব দলে পরিণত হবে। জানা যায়, এরশাদ গত ৪ মে জি এম কাদেরকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে এবং তার অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে একটি সাংগঠনিক নির্দেশ গণমাধ্যমে পাঠান। তখন থেকেই জাপায় রওশন এরশাদ অনুসারী বলে পরিচিত কয়েকজন সিনিয়র নেতা তা মেনে নিতে পারেননি। এরশাদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর পর কয়েকদিন এ বিষয়ে আলোচনা না হলেও কুলখানির পর বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। যদিও এরশাদের মৃত্যুর পরদিন থেকেই সিংহভাগ নেতা-কর্মী জি এম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সম্বোধন করে আসছেন। গত ১৮ জুলাই জাপার বনানী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা জি এম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে অসন্তুষ্ট হন রওশনপন্থি বলে পরিচিত কয়েকজন নেতা। ২০ জুলাই ভাবী রওশন এরশাদের মান ভাঙাতে তার গুলশানের বাসভবনে যান জি এম কাদের। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই সোমবার গভীর রাতে জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান নন বলে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান। যদিও বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদসহ ১০ জন প্রেসিডিয়াম এবং সংসদ সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নামের পাশে রওশন এরশাদ ছাড়া কারোরই স্বাক্ষর নেই। বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠানো না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে নাম থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন তাদের নাম কীভাবে ওই প্যাডে গেছে এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি বলেন, স্যার (এরশাদ) যে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন তার কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে ভালো হতো। অতি উৎসাহীদের জন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, পল্লীবন্ধুর অবর্তমানে পার্টিকে আর ভাঙা যাবে না। পরিবারের সবাইকে সামনে নিয়ে পার্টিকে আরও সংগঠিত করতে হবে। প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সবাই যদি জি এম কাদেরকে আমরা চেয়ারম্যান ঘোষণা করতাম তাহলে আমরা সম্মানিত হতাম। মাসুদ এম রশীদ এমপি বলেন, আমার নাম কীভাবে ওই তালিকায় গেছে জানি না। আমি মনে করি, এইচ এম এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান। পল্লীমাতা রওশন এরশাদও আমাদের সবার শ্রদ্ধেয়।

এদিকে বিবৃতিটি রওশন এরশাদ দিয়েছেন কিনা জানার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জি এম কাদের বলেন, রওশন এরশাদ আমার মাতৃসমতুল্য। উনি আমার অভিভাবক। তার পরামর্শক্রমেই দল পরিচালিত হবে। যে বিজ্ঞপ্তির কথা বলা হচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। উনি এমন বিবৃতি দিতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না। তিনি বলেন, দুই দিন আগেও ভাবীর বাসায় গিয়েছিলাম, আবারও যাব। জানতে চাইলে পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, যখন বিএনপি থেকে নেতা-কর্মীরা জাপায় আসতে শুরু করেছে, দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপির এজেন্টরা দলে বিভেদ সৃষ্টি করে পার্টির ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করছেন। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হবে না। প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, প্রয়াত পল্লীবন্ধু এরশাদের ইচ্ছা ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান, রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধী দলের নেতা। তাদের যৌথ নেতৃত্বেই পার্টি পরিচালিত হবে। এর বাইরে গিয়ে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য পার্টির দু-একজন নেতা চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করছেন। পার্টির তৃণমূলের কাছে তাদের ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা নেই। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এইচ এম এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তার অবর্তমানে জি এম কাদেরই হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। রওশন এরশাদ বিরোধী দলের উপনেতা ছিলেন। ম্যাডাম এখন বিরোধী দলের নেতা হবেন এটাই স্বাভাবিক। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই।

সর্বশেষ খবর