শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাবিতে ছাত্রলীগের পাহারায় ক্লাস পরীক্ষা, পেটাল দুই শিক্ষার্থীকে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গতকাল চতুর্থ দিনের মতো তালা লাগানো এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরা।

তাদের অবস্থানের কারণে ভবনগুলোতে তালা লাগাতে ব্যর্থ হয় আন্দোলনকারীরা। ক্লাস বর্জনের কর্মসূচির বিপক্ষে সবাইকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের অবস্থানের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা চলে বিভিন্ন বিভাগে। তবে উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। মঙ্গলবার ক্লাস বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের ‘দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া’র হুমকি দেয় ছাত্রলীগ। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের  দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থীরা হলেন আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আবু রায়হান ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের আহনাফ তাহমিদ। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের ১৩-১৪ জন মিলে এ দুজনকে মারধর করে বলে জানা গেছে। মারধরে নেতৃত্ব দেন সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল ছাত্রলীগের কর্মী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাবিল হায়দার। তিনি ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী। হামলায় আহনাফ তাহমিদের আঘাত লেগে চোখের কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফিরে গেছেন। হামলার শিকার আবু রায়হান বলেন, ‘আমি আর চার-পাঁচজন আন্দোলন শুরু হয়েছে শুনে আগেভাগেই ক্যাম্পাসে আসি। পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের ১৩-১৪ জন মিলে আমাদের আটকায় এবং পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কারা তালা লাগিয়েছে তা জানতে চায়। আমরা তালা লাগাইনি বললে খারাপ ব্যবহার শুরু করে এবং আমাকে মারধর করে। তাহমিদ সে সময় আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে আমাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে তাকেও মেরে জখম করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। তার চোখে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। আমি হামলাকারীদের মধ্যে নাবিল হায়দারকে চিনতে পেরেছি।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাবিল হায়দার তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সকাল থেকে ক্যাম্পাসেই ছিলাম না।’ তিনি পাল্টা জানতে চান, ‘কী নিয়ে মারধর করা হয়েছে?’ মারধরের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এদিকে ছাত্রলীগের হুমকি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন শেষে বিক্ষোভ মিছিল এবং ‘তালা লাগাও, ঢাবি বাঁচাও’ কর্মসূচি পালন করে তারা। সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীরা। এতে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আমাদের শুধু আশ্বাস দিয়ে আসছে। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি কোনোরকম আস্থা রাখতে পারছে না। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে।’ ডাকসুর অবস্থান প্রশ্নে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ক্লাস বর্জনের। সেই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে আবার ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান দ্বিমুখিতা।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অধিভুক্ত করা বা বাতিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা আন্দোলন করছি।’ তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তালাটা লাগাচ্ছি আমরা প্রতীকী হিসেবে।’ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা। এদিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সাত কলেজের অধিভুক্তি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। গতকাল দুপুরে উপাচার্য কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। উপাচার্য বলেন, ‘অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাত কলেজের অধিভুক্তি হয়েছে। তাই সাত কলেজের সুষ্ঠু সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা হয়, এই জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে এটির সমাধান করা হবে।’ সংকট সমাধানে কমিটি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি সাতটি কলেজের অধিভুক্তি নিয়ে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা ও শিক্ষার্থীদের দাবির সুষ্ঠু সমাধানে কার্যকর সুপারিশ দিতে গতকাল প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের এ কমিটি গঠন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির সদস্যরা হলেন- কলা অনুষদের ডিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ, ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট), বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাঈনুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

সর্বশেষ খবর