শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছেই

কী হবে সাত কলেজের

আকতারুজ্জামান

অধিভুক্ত সাত কলেজ নিয়ে সমস্যায় রয়েছে এসব কলেজে পড়ুয়াসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান চান। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছেই না।

তথ্যমতে, রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি          ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর মাঝে-মধ্যেই ছিল অস্থিরতা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা সেশনজটে অনেক পিছিয়ে পড়েছেন। ফল প্রকাশেও মাসের পর মাস সময় লাগছে। এ ছাড়া প্রশ্ন প্রণয়নে সমস্যা, ভুল প্রশ্ন, সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্ন প্রণয়ন ও গণহারে ফেল করানোর অভিযোগ তাদের। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজ অধিভুক্ত করার পর তারাও সেশন জটে পড়েছেন। এ ছাড়াও নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে তাদের। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সময় দিচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধিভুক্ত করার সময় থেকেই ঢাবি শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারও সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধান না করে অন্যদিকে দৃষ্টি দেওয়ার সময় নেই। অথচ সাত কলেজের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া, ভাইভা নেওয়া, খাতা মূল্যায়নসহ যাবতীয় কাজ করছে শিক্ষকরা। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার বিল্ডিং, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর, বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ শুধু ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য এসব অবকাঠামো করলেও তা প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী ব্যবহার করছে। সাত কলেজের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত সপ্তাহে দুই দিন বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রাখে। এসব কলেজের অধিভুক্তি বাতিল না হলে তারা ফের আন্দোলনে নামবেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সম্প্রতি বলেছেন, বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু কোন উপায়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান হবে তা খোলাসা করেননি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বুধবার প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ, ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর, ডাকসু ভিপি এবং সাধারণ সম্পাদককে সদস্য রাখা হয়েছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান গতকাল বলেন, কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সাত কলেজের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কীভাবে একটি টেকসই সমাধানে আসা যায় সে ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে সাত কলেজের যৌক্তিক সমাধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার পর হবে বলে বুধবার জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

অধিভুক্তি বাতিলের দাবি আন্দোলনের মুখপাত্র শাকিল মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থী ধারণের সক্ষমতা না থাকলেও বর্তমানে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী ধারণ করছে। কিন্তু এসব কলেজ অধিভুক্ত করার পর থেকে আরও বাড়তি প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থীকে বইতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটে পড়ছে। আগে পরীক্ষা নেওয়ার দুই মাসেই ফল প্রকাশ করা হতো। কিন্তু এখন কোনো কোনো বিভাগে সাত-আটমাস লেগে যায়। অবিলম্বে আমরা এসব কলেজের অধিভুক্ত বাতিল চাই। ব্যবস্থাপনা বিভাগের এ শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বর্তমানে অষ্টম সেমিস্টারে পড়ছি। কিন্তু সম্প্রতি ষষ্ঠ সেমিস্টারের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। কবে সপ্তম সেমিস্টারের ফল প্রকাশ করা হবে তা জানি না। আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছি। এর মানে এটা নয় আন্দোলন বন্ধ করেছি। দাবি আদায় না হলে ফের আন্দোলনে নামব। আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধান চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর