রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র এশিয়া নিয়ন্ত্রণে চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র এশিয়া নিয়ন্ত্রণে চীন

রেহমান সোবহান

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু এখন এশিয়া। আর এটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। বৈশ্বিক ক্যাপিটাল ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এশিয়া মূল উৎস হয়ে উঠছে। তাই বৈশ্বিক একচেটিয়া নেতৃত্ব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এশিয়ার দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘দ্য বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ অ্যান্ড দ্য নিউ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ওয়ার্ডার’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এনাম আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর মইনুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি এবং মূলধন উদ্বৃত্ত তৃতীয় বিশ্ব বিশেষত এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সাউথ-সাউথ সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের যে কোনো উদ্যোগের মূল উৎস হতে পারে এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষত চীন। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে এশিয়ার দেশগুলোর বৈশ্বিক উদ্বৃত্তের পুনর্গঠন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির মতো সংস্থাগুলোর একচেটিয়া অধিকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। রেহমান সোবহান বলেন, পৃথিবীর অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্র এখন এশিয়ায়। গ্লোবাল ক্যাপিটাল ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এশিয়া মূল উৎস হয়ে উঠছে। আর চীন তার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা যদি একটি দেশের একচেটিয়া অধিকার বা নেতৃত্ব থেকে মুক্ত হতে চাই তাহলে এশিয়ার দেশগুলোকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে একটি নয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এটা তাদের এবং এশিয়ার স্বার্থেই করতে হবে। বর্তমান বিশ্ব নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি দেশ। তবে সে দেশটির নাম উল্লেখ না করে রেহমান বলেন, চীন তার উদ্বৃত্ত অর্থ তৃতীয় বিশ্বের অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে  বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। যারা এ কথা বলেন যে, চীনের এ বিনিয়োগ ঋণের ফাঁদ তৈরি করছে, তারা ঠিক বলেন না। এক্ষেত্রে যারা পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার উদাহরণ দেন তাদের বলা প্রয়োজন, এ দুটি দেশের বিশাল ঋণের বোঝা আগে থেকেই ছিল। পাকিস্তানের যে বিশাল ঋণের বোঝা রয়েছে তা চীনের জন্য নয়, তাদের বিশাল সেনাবাহিনীর জন্য। চীনের বিনিয়োগের বহু আগেই পাকিস্তান তাদের সাত লাখ সৈন্য পালনের জন্যই এ ঋণের ফাঁদে পড়েছিল। বরং ঋণের ক্ষেত্রে এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের (এআইআইবি) অর্থ ছাড় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থার (আইএমএফ) থেকে দ্রুত হয়। চীনের আধিপত্য বোঝাতে তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক জিডিপি ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে চীনের অংশ ১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে যেভাবে সাজিয়েছিল তাতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এক চূড়ান্ত অসম পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল। জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব কখনোই এটা মেনে নিতে পারেনি। বরং বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমাদের আরোপিত নয়া উদারনীতিতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষের জীবনমান আরও নেমে যায়। সৃষ্টি হয় বিপুল পরিমাণ ধনবৈষম্য। প্রফেসর মইনুল ইসলাম বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির আফিমে ডুবে আছে বর্তমান সরকার। এর ফলে ধনীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে ২০০ জনের বেশি ধনীর সম্পদ ২৫০ কোটি টাকার ওপরে। অন্যদিকে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে আয় বৈষম্য আরও বাড়বে। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পশ্চিমা দুনিয়ার আধিপত্যবাদে এশিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ সৃষ্টি হয়েছে। এশিয়া যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে তারই ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখন এশিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।

 

সর্বশেষ খবর