বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ডেঙ্গু মশা ঠেকাতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘গুজবে কান দেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যদি কোনো মানুষকে অপরাধী মনে হয়, তাকে হত্যা করবেন না। তাকে পুলিশে সোপর্দ করুন।’

গতকাল দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের জরুরি সভায় লন্ডন থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে তিনি এ কথা বলেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করুন। তিনি দুধ  নিয়ে আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন। ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ডেঙ্গু জ্বরটা প্রথম দিকে শহর এলাকা বা ঢাকা শহরে বিস্তার লাভ করছিল। তবে এটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদ। সব মানুষ বাড়িতে যাবে। যারা ডেঙ্গু জ্বরে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে বা যাদের শরীরে এটা রয়ে গেছে, নিজ নিজ এলাকায় গেলে ফের যদি মশা কামড় দেয়, তাহলে এই রোগটা সংক্রমিত হতে পারে। তাই যার যার নিজের ঘরবাড়িতে কাপড়-চোপড় যেগুলো আলনায় ঝোলানো থাকে বা বাক্স পেটরায় থাকে বা আলমারিতে থাকে, এগুলো ঝেড়ে রাখা, কোথাও মশা আছে কি না তা দেখা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। ঘুমানোর সময় মশারি টানানো উচিত। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। আর সরকারিভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন পেশাজীবী, বিভিন্ন সংগঠন, সবাইকে বলব, অফিস-আদালতে এসির পানি, ফুলের টব, ভাঙা হাঁড়ি, আবদ্ধ জলাশয় সব জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয়, আমি ঢাকার দুই সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। মশা যেন ডিম পাড়তে না পারে, মশার লার্ভা যেন তৈরি না হয়, বংশ বিস্তার করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং প্রটেকশন দেওয়ার ব্যাপারে প্রত্যেকটা মানুষকে নিজেকেই করতে হবে, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

দুধ নিয়ে আমদানিকারকদের কারসাজি আছে কিনা খতিয়ে দেখা উচিত : দুধ নিয়ে আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না হঠাৎ একজন প্রফেসর সাহেব, তাঁর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একটা কথা ছড়িয়ে দিয়ে একটা রিট করা বা একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া এর প্রকৃত ফলাফলটা কী হবে, সেটা হয়তো কেউ চিন্তা করে না। দুধ বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। আবার গরুর দুধ বিক্রি করে সেই গরুর খাবারও জোগাড় করা হয়। যারা খামার করেছে বা গরু পালন করছে, তাদের কাছ থেকে দুধ কেনা হচ্ছে। এই মানুষগুলো যদি দুধ বিক্রি করতে না পারে, অর্থ জোগাড় করতে না পারে, তাহলে গরুকে কী খাবার দেবে আর নিজে কীভাবে খাবার কিনে খাবে, এই বাস্তবতাটা চিন্তা করা দরকার। তিনি বলেন, এখানে আমার মনে হচ্ছে যে, আমদানিকারক যারা, তাদের কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটা আমাদের দেখা উচিত বা তারা কোনোভাবে উৎসাহিত করছে কি না? আর যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন, তাদের এ নিয়ে ভাবা উচিত, দেখা উচিত। হঠাৎ একটা গুজব ছড়িয়ে রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করা বা দেশের উৎপাদিত পণ্যের মান সম্পর্কে কথা বলা, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কাজেই যারা গুজব ছড়াবে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবে, তাদের ওপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে যেসব গুঁড়া দুধ আমদানি করা হয়, আমি জানি না যিনি আমাদের দেশের দুধটা পরীক্ষা করেছেন, তিনি বিদেশ থেকে আমদানি করা গুঁড়া দুধগুলো পরীক্ষা করেছেন কি না? আমার মনে হয়, তিনি এটা কখনো করেননি। আমি অনুরোধ করব, তিনি যেন বিদেশ থেকে যেগুলো আমদানি করা হচ্ছে, বাজারজাত করা হচ্ছে, সেগুলো যেন পরীক্ষা করে দেখেন। তিনি বলেন, হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই একজন দুধ পরীক্ষা করে বলে দিল, দুধ ব্যবহারযোগ্য নয় এবং সঙ্গে সঙ্গে রিট করা হয়। সেখানে বলে দেওয়া হয়, পাঁচ সপ্তাহ দুধ ব্যবহার করা যাবে না বা খাওয়ানো যাবে না। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি, মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চেয়েছি। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যাতে খেতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। যথাযথভাবে এগুলো যাতে পরীক্ষা করা হয়, সেজন্য আমাদের বিএসটিআই উন্নত মানের করে দিয়েছি। প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্যের কী কী বিষয় পরীক্ষা করা হয়, তার একটি আন্তর্জাতিক মানদ- আছে। সেই মানদে র ভিত্তিতে এগুলো পরীক্ষা করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়। সরকারের সুনির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে, সেখানে আমরা পরীক্ষা করি।

বন্যা মোকাবিলায় কাজ করছে সরকার : দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য দায়িত্বশীলরা কাজ করছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বন্যাকবলিতদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর