বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার

আমরা কোনো ঋণ মাফ করছি না

শুধু লম্বা সময়ের জন্য কিস্তিগুলো ছোট করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দিচ্ছি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিজে ধরা দিয়ে বলেছে তারা ঋণ পরিশোধ করবে

মানিক মুনতাসির ও আলী রিয়াজ

আমরা কোনো ঋণ মাফ করছি না

আ হ ম মুস্তফা কামাল

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমরা কারও কোনো ঋণ মওকুফ করছি না। শুধু ঋণ পরিশোধের জন্য লম্বা সময় দিচ্ছি। বেশি কিস্তিতে যেন ঋণগুলো পরিশোধ করতে পারে। এটা ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থেই করা হচ্ছে। গত সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদের হারও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেননা এসব ঋণে সুদের হার আগে অনেক বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। এখন ঋণ জালিয়াতি করে পালিয়ে যাওয়া বিসমিল্লাহ গ্রুপও আমাদের কাছে ধরা দিয়েছে। তারা বলেছে তারা ঋণ পরিশোধ করবেন। আবার তারা ব্যবসা করতে চান। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হার বাস্তবায়ন করেছে। আমরা আগামী সপ্তাহেই বেসরকারি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য বসতে যাচ্ছি। এটা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এটা খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, আমরা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি এতে সবাই উপকৃত হবে। এখন আমরা দেখব যে, বাড়তি সুদের হারের চাপে কেউ বিপদে পড়েছে কিনা। আমরা সেগুলো দেখব। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যে এক্সিট প্রভিশন নিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু এটা কার্যকরভাবে কাজ করবে। ব্যবসায়ীরা আবার ফিরে আসবে। যেসব ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তারা আবার ব্যবসায় ফিরে আসবেন। এদেরকে আবার ফেরত আনা হবে। তবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাদের সম্পর্কে আমাদের ভিন্ন চিন্তা। আমরা তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে। তাদেরকে ঋণের অর্থ ফেরত দিতেই হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাজেটে ব্যাংকিং কমিশন করার বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তো বাজেটের কমিটমেন্ট। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়টি জানেন। এ নিয়ে আপাতত তেমন কোনো কাজ শুরু হয়নি। তবে খুব শিগগিরই আমরা কাজ শুরু করব। এটা খুব তাড়াতাড়িই করা হবে। ব্যাংক খাতের জন্য একটা কার্যকর কমিশন তো আমরা করবই। শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। সেটা তারা দেখবে। এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কেও আমি কোনো কথা বলতে পারি না। তারা একেকটা স্বাধীন সংস্থা। তবে আমি শুধু এটুকু বলব। পুঁজিবাজার নিয়ে অযথা কথাবার্তা বলা হয়। পুঁজিবাজার একটা ইন্টারেস্টিং জায়গা। যদি একটু ইনডেক্স বাড়ে তাহলে বলা হয় এটা আর্টিফিশিয়ালি (কৃত্রিম) বাড়ানো হয়েছে। আবার যদি একটু কমে তাহলে বলা হয় এটা তলানিতে চলে গেছে। এখানে কারও বিশ্বাস নাই। এ জায়গা থেকে বের হওয়ার রাস্তা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ততদিন এ জায়গা থেকে বের হওয়া যাবে না, যতদিন আস্থাটা শক্তিশালী না হয়। তিনি বলেন, ব্যবসায় লাভ-লোকসান হবে এটা মেনে নিয়েই তো ব্যবসা করতে হয়। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদে। আজ বিনিয়োগ করলাম, কালকেই লাভ নিয়ে বেরিয়ে যাব এটা হবে না। এখানে ভালো ভালো কোম্পানির বিনিয়োগ আসতে হবে। বড় বড় কোম্পানি লিস্টেড হতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হলো পুঁজিবাজার। আর আমাদের দেশের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। এটা শুধু আমাদের কথা নয়। এটা বিশ্বব্যাংক বলে। আইএমএফ বলে। অন্যরাও বলেন। সিপিডি এক সময় আমাদের বিরুদ্ধে বলত। এখন তারাও বলে আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী। তাহলে আমাদের পুঁজিবাজার কেন শক্তিশালী হবে না। কিন্তু আমাদের যে সমস্যা সেটা হলো পুঁজিবাজার আর অর্থনীতি এখনো ইন্টিগ্রেট (একীভূত) করে নাই। আমরা মনে করি এটা হয়ে যাবে। এর জন্য যা যা করা দরকার সেটা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসিকে) করতে হবে। এ জন্য বড় বড় কোম্পানি এবং ভালো ভালো ইস্যুজ যথাযথ মূল্যে বাজারে আনতে হবে। মূল্য বাড়িয়ে দেখানো যাবে না। প্রয়োজনে দুই থেকে তিনটি কোম্পানিকে দিয়ে মূল্যায়ন করাতে হবে। এটা অবশ্য বিদেশে প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আমাদের এখানে এসবের প্রয়োজন রয়েছে। ভালোভাবে দেখতে হবে প্রাইসিংগুলো ঠিক আছে কিনা। এটা অবশ্য আমাদের জন্য একটা দুর্ভাগ্য যে, অনেক সময় প্রাইসিংয়ের ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেখানো হয়। বাজেট বাস্তবায়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা আবারও বসব। অডিটরদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়ন প্রতি বছর কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দেখুন আগে কত কোটি টাকার বাজেট হতো আর এখন কত টাকার বাজেট হয়। সেখানে দেখলে তো বোঝা যায় বাজেট বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে। আর সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, সবই তো বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে শুধু এনবিআরের পার্টে আমরা একটু পিছিয়ে আছি। বাকি সবগুলো তো ঠিক আছে। সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর বাড়ানোর এবং তা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা খুব তাড়াতাড়িই একটা এসআরও (প্রজ্ঞাপন) জারি করা হবে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে নতুন বাজেট অনুযায়ী যাদের সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। তারা সেটা অবশ্যই ফেরত পাবেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর