বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোগ্যপণ্যের বাজার নষ্ট করছে মেঘনা-সিটি গ্রুপ

অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ, বাজারে শৃঙ্খলা খুবই প্রয়োজন -এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেঘনা ও সিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ভারসাম্য নষ্ট করার অভিযোগ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি মেঘনা ও সিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। এতে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এ বৈষম্য বন্ধ ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে ভারসাম্য আনতে আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো মূল্যে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। এখানে শৃঙ্খলা খুবই প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এনবিআর মিলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। জানা গেছে, কর অবকাশ সুবিধা নিয়ে নিজেদের পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করছে মেঘনা ও সিটি গ্রুপ। বেজার সনদ নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে তাদের অন্যান্য শিল্পেও একই সুবিধা নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর। একে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত শিল্পে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার অপব্যবহার বলে মনে করছে সংস্থাটি।

এনবিআর বলছে, কর অবকাশ সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের ভারসাম্যও নষ্ট করছে। তাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কর সুবিধা না দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এজন্য আইন পরিবর্তনে বেজাকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে এনবিআর। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শুল্ক-কর সুবিধার অপব্যবহার বিষয়ে ১৬ জুলাই এনবিআরে জরুরি সভা হয়। এতে এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইন অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প গড়ে তোলা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অগ্রিম আয়কর (এআইটি), আগাম কর (এটি) ও আয়কর অব্যাহতি পায়। আর এ সুবিধা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠান ভোজ্য তেল, চিনি, আটা, ময়দা স্থানীয় বাজারে কম দামে সরবরাহ করছে। অথচ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী অন্য কোম্পানিগুলোকে সব ধরনের কর পরিশোধ করতে হয়। তাই তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বেশি পড়ে। এতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জানা গেছে, মেঘনা ও সিটি গ্রুপ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিটি ইকোনমিক জোন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে। সিটি ইকোনমিক জোনে সিটি অটো রাইস ও ডাল মিলস, সিটি এডিবল অয়েল, রূপসী সুগার মিল, রূপসী ফ্লাওয়ার মিল, রূপসী ফিড মিল ও সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে সিটি অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস ও সিটি এডিবল অয়েল ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে। একই বছরের ডিসেম্বর থেকে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে। মেঘনা গ্রুপের অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে দুটি। একটি মেঘনা ইকোনমিক জোন, আরেকটি মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় ২৪৫ একর জমি নিয়ে মেঘনা ইকোনমিক জোনে স্থাপিত মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড ও সোনারগাঁও ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড ২০১৮ সালের ৩০ মে উদ্বোধন করা হয়। মেঘনা এডিবল অয়েলসে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ কারখানায় পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল উৎপাদন করা হয়। এখানে উৎপাদিত ভোজ্য তেলের ২০ শতাংশ ভারত ও নেপালে রপ্তানি করা হয়। সোনারগাঁও ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ডাল মিলসে ২ কোটি ৯৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এ কারখানায় আটা, ময়দা ও ডাল উৎপাদন করা হয়। এখান থেকে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের ২০ শতাংশও ভারত ও নেপালে রপ্তানি করে গ্রুপটি। এ ছাড়া মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেডে বিনিয়োগ হয়েছে ৮ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। পরিশোধিত চিনি উৎপাদন করা হয় এ কারখানায়। আর সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেডে বিনিয়োগ হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ কারখানায় উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের ৩০ শতাংশ ভারত ও নেপালে রপ্তানি করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর