বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো

জিন্নাতুন নূর, শামীম আহমেদ ও আকতারুজ্জামান

সরকারি হাসপাতালের পর এবার ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলো। প্রতিদিনই  বাড়ছে রোগী। নতুন রোগীর জায়গা করে দিতে ভর্তি থাকা রোগী মোটামুটি সুস্থ হলেই চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। রোগীর মাত্রাতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে হাসপাতালের ফটক পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এক হাসপাতালে সিট না পেলে রোগী ও তার স্বজনরা অন্য হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন। গড়ে এসব হাসপাতালে ১৫-২০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোর ইমারজেন্সি কেবিনের বেশির ভাগই ডেঙ্গু রোগীদের দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর এ্যাপোলো হসপিটালসে গতকাল দুপুর ২টায় দেখা যায় বিলিং কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। রোগ পরীক্ষার কাউন্টার ও পরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহের কাউন্টার দুটোতেই ভিড়। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বেশির ভাগই ডেঙ্গুজ্বরের পরীক্ষা করাতে এবং ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে কিনা তার পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে এসেছেন। প্রতি ২ মিনিটে এ হাসপাতালে একজন করে রোগী ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে কিনা তার পরীক্ষা করাতে আসছেন। অতিরিক্ত এই রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স এখন অধিকাংশ সময় ডেঙ্গু আক্রান্তদের বহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে এসে সিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অন্য হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েও কেউ কেউ এখানে ভর্তি হতে আসছেন। কিন্তু সিট খালি না থাকায় তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে।

রাজধানীর একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্মকর্তা রিয়াদুল ইসলাম নয়ন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ্যাপোলো হসপিটালসে ভর্তি হতে গিয়ে জানতে পারেন সেখানে সিট খালি নেই। পরে তাকে অন্য হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে হয়। গত বুধবার রাতে বনশ্রী থেকে এ্যাপোলো হসপিটালসের অ্যাম্বুলেন্সে করে কলেজ পড়ুয়া মেয়ে আদিবাকে নিয়ে তার মা আয়েশা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি করান। তিন দিন ধরে আদিবা জ্বরে ভুগছেন। তাকে হাসপাতালের ইমারজেন্সি কেবিনে ভর্তি করানো হয়। তার মা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, হাসপাতালে এসে জানতে পারি এর আগের দিন রোগীর চাপে কর্তৃপক্ষকে ফটক পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আর ইমারজেন্সি কেবিনে থাকা সব রোগীই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। দুই বছরের ছোট্ট শিশু মাহনূর কায়সারের চাচা শাহনেওয়াজ আলী গতকাল এ্যাপোলো হসপিটালসে এসেছিলেন ভাতিজির ডেঙ্গুজ্বরের রিপোর্ট নিতে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে এখানে আছি। আশপাশে যারা দাঁড়িয়ে আছেন তার বেশির ভাগই এসেছেন ডেঙ্গুজ্বর পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে।’

গতকাল সরেজমিন ইউনাইটেড হাসপাতালে অসংখ্য মানুষকে ডেঙ্গুজ্বর শনাক্তের পরীক্ষা করাতে আসতে দেখা গেছে। এর মধ্যে অনেকের ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও রোগের প্রকোপ গুরুতর না হওয়ায় চিকিৎসক পরবর্তী করণীয় জানিয়ে বাড়িতে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। আট বছরের শিশু আবদুল্লাহ বিন মনিরের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। রোগীর মা ক্যাসিয়া পাশা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুই দিন আগে মনিরের জ্বর দেখা দেওয়ায় ৩০ জুলাই তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। চিকিৎসক দুটি পরীক্ষা দিলেও আমরা নিজেরাই তিনটি পরীক্ষা করাই। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। তবে রক্তে প্লাটিলেট সেল না কমায় চিকিৎসক বাড়িতে বিশ্রামে রেখে বেশি বেশি তরল পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।’ খরচ জানতে চাইলে বলেন, ‘চিকিৎসক বাবদ ১৫০০, তিনটি পরীক্ষায় ১৪০০ ও ওষুধ বাবদ ১০০ টাকা খরচ হয়েছে। তবে প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন সিবিসি টেস্ট করতে বলেছেন চিকিৎসক।’ চার দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর গতপরশু ইউনাইটেড থেকে ছাড়া পেয়েছেন ডেঙ্গু রোগী ফৌজিয়া আফরিন। প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় তাকে রক্ত দিতে হয়েছিল। ফৌজিয়ার স্বজন শিরিন জানান, ‘চিকিৎসায় আমাদের ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখনো ফৌজিয়া পুরোপুরি সুস্থ নন। তবে চিকিৎসক বলেছেন, বিপদ কেটে গেছে। তাই বাড়ি নিয়ে এসেছি।’ ইউনাইটেড হাসপাতালের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তবে আসনের তুলনায় রোগী বেশি হয়ে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা ভাবতে হবে।’ তিনি জানান, জানুয়ারি থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৩৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। গতকাল ছাড়পত্র নিয়ে ২৭ জন হাসপাতাল ছাড়ার পরও ৯০ জন ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৪১টি শিশু রয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। দিনের বাকি সময়ে আরও রোগী আসতে পারে। হাসপাতালটিতে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে দুজনের।

কমবেশি একই দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর আরেক বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ারে। নাম প্রকাশ না করে হাসপাতালের ডেঙ্গু হেল্প ডেস্কে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ হাসপাতালে দেড় শতাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী আসছেন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর