শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ফাঁকফোকর

ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছে ১০ জন সরকারি হিসাবে শূন্য, এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ায় ঝুঁকি বেশি, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১৭১২

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ফাঁকফোকর

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৯ মাস বয়সী জোহান। গতকাল রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য রক্ত নেওয়ার সময় তার কান্নায় হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয় -জয়ীতা রায়

ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সরকারি হিসাবে বছরজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ জন মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে। অথচ রাজধানী এবং দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক গতকাল পর্যন্ত ৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। সরকারি হিসাবে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যায় ফাঁকফোকরে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৭১২ জন। এর মধ্যে রাজধানীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৫০ জন এবং সারা দেশে ৫৬২ জন। রাজধানীর ১৩টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল এবং বেসরকারি ২৬টি হাসপাতালে ভর্তি রোগী গণনা করে এই হিসাব দেওয়া হয়েছে। অথচ ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট কলেজ হাসপাতালে গতকালও ১০৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই রোগী যোগ হয়নি সরকারি হিসাবে। রাজধানীর প্রায় ৩৫০টি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর বাইরে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে যেসব রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের সংখ্যা আসছে না গণনায়। এর মধ্যেই দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। এখন পর্যন্ত হিসাবে শুধু জেলা সদর হাসপাতাল এবং কিছু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যাও থাকছে অজানা। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি মৃত্যু নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি।

সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৪ জন বলা হলেও বাংলাদেশ প্রতিদিনের হিসাবে ৪৭ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১০ জন।

মারা যাওয়া রোগীরা হলেন- ফরিদপুরের রাবেয়া (৫০), আজমপুরের ফাতেমা (৪৩), এলিফ্যান্ট রোডের নাসিমা (৩৩), কামরাঙ্গীরচরের হাফিজা (৬১), ডেমরার রাজু (২০), লালবাগের ফরহাদ (৪৪), গাজীপুরের রিতা (২৮), ইস্কাটনের ফারজানা (৪২), ওয়ারীর লিটন হাওলাদার (২৫)। এই নয়জনের বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রবিউল ইসলাম রাব্বি নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, এই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৯ জন। পরবর্তীতে আরও একজন মারা গেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে ঢাকা মেডিকেলে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যুর তথ্য নেই। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ তথ্য কন্ট্রোল রুমকে সরবরাহ করেছে। সরকারি-বেসরকারি হিসাবের এই পার্থক্যের ব্যাপারে আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, হাসপাতাল যে টেস্ট করে এই ফলাফল দেয় সেটাকে স্ক্রিনিং টেস্ট কিংবা র‌্যাপিড টেস্ট বলা হয়। এতে ‘৫ শতাংশ ফলস পজেটিভ ফলস নেগেটিভ’ হতে পারে। কিন্তু আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে তারপর তথ্য দিই। যেমন হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন যিনি মারা গেলেন, তার রক্তের নমুনা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কোনো হাসপাতালে ভর্তি হননি কিংবা আগে কোথাও টেস্টও করাননি। এরকম অনেকের মৃত্যু ডেঙ্গুতেই কিনা তা শনাক্ত করতে সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি আরও বলেন, ২০টি কেস রিভিউ করে আমরা ১৪টিতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গু পেয়েছি।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শয্যা বাড়ছে ঢাকা মেডিকেলে : ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যে হারে রোগী আসছে, তা হিসাব করে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভবনে কিছু রোগীদের নেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ইউনিট করা হচ্ছে। এ ছাড়া আইসিইউ এবং এইচডিইউতে শয্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে পরিচালক জানিয়েছেন।

এদিকে রাজধানীর ১১টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুমুক্ত বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সমন্বয় সভায় তিনি এ কথা জানান। মেয়র বলেন, ১৪, ১৮, ২৩, ২৯, ৩৫, ৪২, ৫৫, ৫৬ নম্বরসহ ১১টি ওয়ার্ড এবং জিগাতলা, হাজারীবাগ কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা কলেজ এলাকা, নিউ মার্কেট, লালবাগ, নবাবপুর, গণকটুলী, ইসলামবাগ, বংশাল, ইংলিশ রোড, পূর্ব জুরাইন এলাকাগুলো এখনো ডেঙ্গুমুক্ত। কিন্তু জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট কলেজ হাসপাতালেই বংশাল এলাকার ছয়জন রোগী ভর্তি আছেন। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন আয়েশা আক্তার (২৮) এবং তাহমিনা খাতুন (১৮)। পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন আব্বাস উদ্দিন (৩৯), তাজ উদ্দিন (৪৫), নোমান হোসেন (২২) এবং শাহীন আলী (২৭)। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কামরাঙ্গীরচরের হাফিজা (৬১)।

আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাশেদ হোসাইন জানান, পুরান ঢাকায় ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল ও ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ৪৪০ জন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৯৭ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হন ৮১ জন। এ হাসপাতালে বর্তমানে ৩৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধির কারণে গতকাল সেখানে ১০০ রোগী ধারণ সম্পন্ন নতুন ওয়ার্ড উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু টেস্টিংয়ের কয়েক লাখ কিটস আনার ব্যবস্থা করেছি। আজ রাতে (গতকাল) ১ লাখ কিটস আসবে। আগামীকাল (আজ) বাকিগুলোও চলে আসবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদের সময় ডেঙ্গু রোগীরা বাড়িতে যাবে। এ সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ১০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১১ জন শিশুকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার ১২৯ জন ভর্তি ছিল। ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এ কে এম নুরনবী বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গু নিয়ে আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হবে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করার মেশিন সংকট রয়েছে। যে কারণে রোগীরা অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।

আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজে সচেতনতা সভা : ব্যক্তি সচেতনতার মাধ্যমে ডেঙ্গু উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করলে খুব দ্রুত তা প্রতিরোধ সম্ভব। আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে কোনো মশা কামড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রতি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গতকাল আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আয়োজিত মগবাজার ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. আশরাফ-উজ-জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. খাদিজা বেগম।

এদিকে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েই চলেছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিদের পাঠানো বিবরণ-

চট্টগ্রাম : গতকাল এক দিনেই চট্টগ্রামে ৩২ জন নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৮ জন এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৮০ জন। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালে ৭৩ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১০৭ জন। সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং চমেক হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত বুধবার এক দিনেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিল ২৬ জন।

বরিশাল : বরিশালে ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া ৩৩ জন নিয়ে গতকাল সকাল পর্যন্ত বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেখা গেছে ৭৯ জনকে। তবে হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের ব্লাড প্লাটিলেটস পরীক্ষার ‘এন্টিজেন’ না থাকায় ১ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করে রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ৫০০ টাকা ফির নির্দেশনাও কেউ মানছে না।

রাজশাহী : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ আগে স্বামী আবদুল ওয়াহেদ মারা যাওয়ার পর এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আকিকুন্নাহার। চিকিৎসকরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নাচোল থেকে আসা ১৮ বছর বয়সী শিমুল নামের আরও এক রোগীর অবস্থা গুরুতর বলেও জানান চিকিৎসক। যদিও তাকে ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল নতুন করে আরও ১১ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এখন ৪৮ জন।

মাদারীপুর : ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জন আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ জনে। তাদের মধ্যে ২৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সিভিল সার্জন মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এতে ভয়ের কিছু নেই।

বরগুনা : বরগুনায় ৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল, আমতলী ও বেতাগী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শনাক্ত করা হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ১৭ জন বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কুমিল্লা : কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ পর্যন্ত শতাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৫ জন ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে কুমেক হাসপাতালে ৪৬ জন এবং অন্যান্য হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নীলফামারী : নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুচিয়ার মোড় গ্রামের ভূষণ রায়ের ছেলে পরিতোশ চন্দ্র রায় (২৮), ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সোনারায় গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে রেয়াজুল ইসলাম (২০) ও দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের নমির উদ্দিনের ছেলে আবদুল লতিফ (৪৫) চিকিৎসাধীন।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১৩ জন। বাকি একজনকে বরিশাল শেবাচিমে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন স্বজনরা। গত ১৬ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ জন ডেঙ্গু রোগী। এ পর্যন্ত ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগী ২৮ জন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৪৬ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তরা সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল, খাজা ইউনুস আলী হাসপাতাল, নর্থবেঙ্গল হাসপাতাল, আভিসিনা হসপিটালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যদিকে সদর হাসপাতালে বেড সংকট ও চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

ময়মনসিংহ : ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৮ জনে। ২৪ ঘণ্টায় এন্টিজেন টেস্ট করে ৩৪ জনের পজেটিভ পাওয়ায় তাদের ভর্তি করা হয়েছে। ২১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৩৭ জন।

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) : রায়পুর উপজেলায় ৭ ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এতে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এই উপজেলায়।

খুলনা : খুলনা জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় নতুন করে ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চিকিৎসাধীন ৪৭ জন। জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীর অব্যাহত চাপে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তে ব্যবহৃত কিট (এনএসওয়ান পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস) শেষ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও তা পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি চাহিদা মেটাতে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের জন্য স্থানীয়ভাবে ১০০ কিট কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ১২০টি কিট স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে  আক্রান্ত রোগীর তুলনায় এগুলো পর্যাপ্ত নয়।

টাঙ্গাইল : ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নতুন আরও ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ জনে। এর মধ্যে দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গত নয় দিনে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫ জন। বাড়িতে চলে গেছেন একজন এবং ৪ জন ঢাকায় চিকিৎসাধীন। এ ছাড়াও বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে টেস্টের পর ৪ ডেঙ্গু রোগ বহনকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দুজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

দিনাজপুর : দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে নতুন-পুরনোসহ ৩৮ জন হয়েছে।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। গত ২০ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে মোট ১২৭ জন। এর মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

বগুড়া : জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, শামসুন নাহার ক্লিনিকে ২, আমদীঘিতে ১, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৫ এবং বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬০ জন ডেঙ্গু রোগী। ৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। বগুড়া সিভিল সার্জন ডা. গওসুল আজিম চৌধুরী জানান, বগুড়াতে এডিস মশার অস্তিত্ব আছে কিনা এ বিষয়ে পুরোটা জানা নেই। এমন কোনো সংবাদও পাওয়া যায়নি যে এডিস মশা বগুড়ায় আছে। আমাদের জনবল কাজ করছে। এমন ঘটনা থাকলে জানানো হবে।

ভোলা : ভোলার সিভিল সার্জন ডাক্তার রথীন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, ভোলায় গতকাল পর্যন্ত ১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন এবং চরফ্যাশন হাসপাতালে ২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর