শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
সেই শশাঙ্ক ব্যানার্জির এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার-২

নেহেরু বললেন, বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরির দায়িত্ব মুজিবের

পীর হাবিবুর রহমান

নেহেরু বললেন, বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরির দায়িত্ব মুজিবের

শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পরিকল্পনা নিয়ে লেখা শেখ মুজিবের চিঠি নয়াদিল্লির রাইসিনা হিল, সাউথ ব্লকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিসে “‘ট্রিপল কোডেড’’’ সাইফার টেলিগ্রামের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। আসল চিঠিও একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করে পাঠানো হয়। আমরা সবাই জানতাম সরল বিশ্বাসে চতুর চীনের দখলদারিত্বের কারণে ভারত প্রধানমন্ত্রী নেহেরু শোকের মধ্যে আছেন। তারপরও তিনি ভালোমতো শেখ মুজিবের চিঠি পড়ে প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখলেন এবং দ্রুত তিনি তার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি মিটিংয়ে বসলেন। নেহেরু তার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধীনতার জন্য শেখ মুজিবের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সাহায্যের পথ বাড়াবেন কিনা? গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সবাই স্টেশনে ছিলেন না। কেউ ছিলেন যাত্রাপথে, কেউ ছিলেন বিদেশে। তাই উচ্চপর্যায়ের মিটিংটি হতে সময় লেগেছিল। নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছিল। আমার মনে হয় এটি কূটনৈতিক জটিলতার জন্য নয়, বাংলাদেশকে সমর্থন করলে ভারতকে যেসব বিষয়ে মুখোমুখি হতে হবে, সেই সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো খুব সাবধানে পর্যালোচনা করছিল। তিনি বলেন, এদিকে, এই দীর্ঘ অপেক্ষা শেখ মুজিবকে অধৈর্য করে তুলেছিল।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন কে দেয়া লন্ডনের বাসভবনে টানা দু’ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে তৎকালীন ঢাকাস্থ ভারতীয় উপ হাইকমিশনের রাজনৈতিক কর্মকর্তা শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি একথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ মুজিব মনে করছিলেন, ঢাকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে তার আলোচনা আসলে তাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে না। তাই তিনি তার পথ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি গোপনে সীমান্তবর্তী ভারতের আগরতলায় পাসপোর্ট ছাড়া হাজির হলেন। সেখানে শেখ মুজিব ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন সিংয়ের সঙ্গে কয়েকটি মিটিং করলেন। সেসব মিটিংয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে ভারতের রাজনৈতিক সমর্থনের আমন্ত্রণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর কাছে পাঠাতে অনুরোধ করলেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এটাও জানালেন, ঢাকাস্থ ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া দিতে অনেক বেশি দেরি করছেন, কিন্তু তার হাতে খুব বেশি সময় নেই।

শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির মতে, তার মনে হয়েছিল শেখ মুজিব মনে করেছিলেন শচীন সিংয়ের মতো একজন রাজনীতিবিদ হয়তো কূটনীতিবিদের চেয়ে তার কথা ভালোমতো বুঝতে পারবেন এবং নেহেরুকে বোঝাতে পারবেন। আগরতলায় অল্প সময় অপেক্ষা করার পরই মুজিব দিল্লি থেকে সাড়া পেলেন, তাকে বলা হলো; সাড়া দিতে দেরি হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুঃখিত। তবে নেহেরুর পরামর্শ হচ্ছে শেখ মুজিবের জন্য একটি মাত্র চ্যানেল ব্যবহার করে কাজ করাটা ভালো হবে, আর সেটি হচ্ছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন, আগরতলা নয়। মুজিবকে আরও জানানো হলো, তিনি আগরতলায় থাকতেই তাকে সব ধরনের সমর্থনের সিদ্ধান্ত ঢাকায় পৌঁছে গেছে। শেখ মুজিবের আগরতলা থেকে ফিরে আসার পথেই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা তার গোপন সফরের খবর পেয়ে যায় এবং দেশে ফেরার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীতে ৬ দফা নিয়ে তিনি তীব্র জনমত গড়লে তাকে আবার গ্রেফতার করে পরবর্তীতে মামলা দেয়া হয়। যা, ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ নামে বা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে পরিচিত।

শেখ মুজিবের চিঠি নিয়ে নেহেরু তার বাসভবনে সব মুখ্যমন্ত্রী, গভর্নর ও তিন বাহিনী প্রধানকে ডেকে বৈঠক করেছিলেন, সেই বৈঠকে শেখ মুজিবের চিঠি দেখিয়ে তার স্বাধীনতার প্রস্তাব ও ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরে সবার মতামত জানতে চাইলেন। তিনি সবাইকে প্রশ্ন করলেন, আমরা কি সাহায্য করতে পারি? ভারতের সেনাপ্রধান তখন জানতে চাইলেন, আপনি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? নেহেরু বললেন, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই দেশের সব নীতি-নির্ধারকের মতামত চাইছি। তখন ভারত ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইনিদের, আলজেরিয়ায় বেনবেল্লাকে ও দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যালসেন মেন্ডেলার জন্য মেডিকেল সাহায্য পাঠাচ্ছেন। নেহেরু জানতে চাইলেন, শেখ মুজিবের স্বাধীনতা-সংগ্রামকে সমর্থন দিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি বলবে? তখন অনেকেই উত্তরে জানালেন, সিদ্ধান্ত নিলে কে কি বলল, তাতে যায় আসে না। শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবকে না বললে অভদ্রতা হবে মনে করে, নেহেরু ছয় মাস সময় নিলেন। অন্যদিকে অধৈর্য শেখ মুজিব ঢাকাস্থ ভারতীয় মিশনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা মনে করে, এদের দিয়ে কিছু হবে না ভেবে আগরতলা ছুটে গিয়েছিলেন।

পন্ডিত নেহেরু পরবর্তীতে ডেপুটি হাইকমিশনার সৌর্য্য কুমার দেখা করতে গেলে বলেছিলেন, শেখ মুজিবকে জানিয়ে দিতে ভারতও চায় না; কেউ মাথানত করুক, কখনো আমরা এটি বলবও না, আমরা সমবন্ধুত্বে বিশ্বাসী। তবে শেখ মুজিবের স্বাধীনতা-সংগ্রামের রোডম্যাপের সঙ্গে দ্বিমত করে নেহেরু বলেছিলেন, এ সময় স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য অনুকূল নয়। চীনের কাছে অপমাণিত হওয়ার পর ঠিক ওই মুহূর্তে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করাও ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। মুজিব যদি আসলেই ভারতের কার্যকরী সাহায্য চান, তবে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা-সংগ্রাম চলছে, তাতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেহেরু নিয়েছেন। কারণ নেহেরু বুঝতে বিশ্বাস করেন, শেখ মুজিবুর রহমান একজন জাদুকরী গণনেতা এবং তুরস্কের কামাল আতাতুর্কের মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শও বহন করেন।

শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, এরই মধ্যে ঢাকায় ভারত ও আওয়ামী লীগের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরির একটি প্যাকেজ অপেক্ষা করছিল। প্যাকেজটির ভিত্তি ছিল বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে দুদেশের সমমূল্যবোধ ও পারস্পরিক বিশ্বস্ততা, চুক্তিটি একটি রাজনৈতিক নিয়ম-নীতির মতো দেখাচ্ছিল। এখানে আমাকে বলতেই হবে, চুক্তির শর্তগুলো বুঝতে সেগুলো শুধু গোপনীয় সরকারি দলিল হিসেবে বিচার করলে হবে না; এর কোনো কপি আমার কাছে নেই। কিন্তু আমার স্মৃতি থেকে যতটা বিশ্বাসযোগ্যভাবে সম্ভব এগুলো বের করে আনছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ মনে রাখার স্মৃতিশক্তির ওপর বিশ্বাস রেখে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, এখানে ভুলের কোনো অবকাশ নেই।

নেহেরু সে সময় শেখ মুজিবকে আরও জানিয়ে দেন তার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কোনো তাড়াহুড়া করা চলবে না। ব্যর্থতা এড়াতে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতেই হবে। লন্ডনে গেলে কোনো উদ্দেশ্যই সাধন হবে না। নেতৃত্বের অভাব কোনো সুফল বয়ে আনে না। শেখ মুজিবকে সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ে রুখে দাঁড়াবার জন্য উপস্থিত থাকতে হবে। শেখ মুজিবকে আরও পরামর্শ দেওয়া হয়, তিনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন তখন তার কয়েক বছর গণমানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মুক্তির পথে অসংখ্য চড়াই উতরাই থাকবে। সেসব বাধা অতিক্রম করে রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারলেই মুজিব নিজেকে স্বাধীনতার বীর হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন। এমনকি শেখ মুজিবকে বলা হয়, তার সমাবেশে যদি লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হয়ে তার কথা শুনতে আসে; তখনই বিশ্ব তাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সত্যিকারের নায়ক বলে মেনে নেবে। এ কারণে তাকে তার বাক্য বিন্যাসের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতির জনপ্রিয়তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সৌভাগ্যবান যে, তার হাতে ইত্তেফাকের মতো বিশ্বস্ত সংবাদপত্র ও মানিক মিঞার মতো সম্পাদক আছেন। তিনি একজন শক্তিমান মুখপাত্র, যিনি ইতিমধ্যেই পূর্বপাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসনের সচেতনা তৈরিতে কাজ করছেন। ভারত জানিয়ে দেয়, বিপুলসংখ্যক জনসমর্থন তৈরি হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কৌশলগত সমর্থন দেওয়ার জন্য তারা তৈরি থাকবে। কিন্তু বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি করার দায়িত্ব শেখ মুজিব ও তার আওয়ামী লীগের, অন্য কারও নয়।

শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান একজন দুর্র্ধর্ষ সাহসী রাজনীতিবিদই ছিলেন না; বিচক্ষণ নেতাই ছিলেন; অনন্য সাধারণ সংগঠক ছিলেন। পশ্চিম বঙ্গের একটি দৈনিকের সেøাগান আছে; ভগবান ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। তেমনি শেখ মুজিবকে দেখেছি, তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পেতেন না এবং তিনি তার বিশ্বাস ও লক্ষ্য অর্জনে অমিত সাহসী, বেপরোয়া ও অবিচল ছিলেন। তিনি তার দলকে শক্তিশালী করেছেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং ইয়াহিয়া খানের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, একচ্ছত্র বিজয় অর্জন করে বিশ্ববাসীর সামনে বাঙালির একমাত্র নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ৬৩ থেকে ৭১ মাত্র সাত বছরের একটু বেশি সময় নিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন এবং তিনি জনগণের সামনে এই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি জনগণের জন্য, দেশের জন্য জীবন দিতে পারেন বলে বিশ্বস্ততা অর্জন করেছেন। ৬৩ সালের ধারণাগত জায়গা থেকে ভারত ও শেখ মুজিব দুপক্ষই চতুরতার সঙ্গে কাজ করছিল এবং শেখ মুজিব নিজের ক্যারিশমা দেখিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।

শশাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, চীনের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের বেদনা সইতে না পেরে, ’৬৪ সালে নেহেরু পরলোক গমন করলেও তিনি শেখ মুজিবের স্বাধীনতা-সংগ্রামকে সমর্থন ও সহযোগিতা দানের কথা লিখে রেখে এর যাতে অন্যথা না হয়, সেই মন্তব্য করে গিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় এসে তার পিতার অঙ্গীকার রক্ষা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে বেরিয়ে ’৬৬ সালে তার ছয়দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি ও তার দলকে জনপ্রিয়ই করেননি, জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পাকিস্তানি জেনারেলরাও জেনে গিয়েছিলেন, ছয়দফা দাবি আসলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামো থেকে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়ার কর্মসূচি। আইয়ুব খান এটিকে স্তব্ধ করতে না পেরে শেখ মুজিবকে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান বা আগরতলা মামলায় কারাবন্দি করে ফাঁসি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুজিব তখন বাঙালি জাতির বিশ্বস্ত নেতা হয়ে ওঠেছেন। তাই শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আইয়ুবের পতনই হয়নি; শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হয়। আর সেই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির নয়নের মনিতে পরিণত হন। পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক জেনারেল আইয়ুব খান ’৬৯-এর ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ছয়দফার ভয়ের পরিণতি উচ্চারণ করেছিলেন এভাবে, ‘আমাদের দেশের এই ধ্বংসের ওপর দাঁড়িয়ে এর তত্ত্ববধান করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তিনি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে সেদিন ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আর ৩১ মার্চ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন।

ব্যানার্জি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাকে তার অফিসে ডেকে নিলেন। বললেন, আমাকে বাগদাদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমি উর্দু জানি, আরবিটাও যেন সেখানে গিয়ে শিখে নিই। কিন্তু আমার মূল দায়িত্ব হচ্ছে, শেখ মুজিবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং আমার ওপর অর্পিত আগের দায়িত্ব সেখানে বসে পালন করা। বাগদাদে স্কুল অব ল্যাঙ্গুগুয়েজ ‘কুলিয়াত আল নুগাত, জামে কি বাগদাদ’-এ আমি ভর্তি হয়ে যাই আরবি শেখার জন্য। প্রিন্সিপাল আমাকে প্রশ্ন করলেন, আমি কলেমা পড়ালে আপনার অসুবিধা হবে? বললাম, কোনো অসুবিধা নেই। আমি সব ধর্মকে সম্মান করি। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফও পাঠ করেছিলেন। তিনি কোরআনের একটি আয়াত আরবীয়দের উচ্চারণে আমাকে শোনালেন, শুনে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। তিনি আরও বললেন, তিনি বাগদাদ যাবার এক সপ্তাহ পরই ইরাকের ক্ষমতায় এসেছেন। তার সঙ্গে জীবনে সেই সময়ই একবার একঘণ্টার কূটনৈতিক সৌজন্য সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তিনি বললেন, সাদ্দাম হোসেনকে খুব কোমল মনের অমায়িক ভদ্রলোক মনে হয়েছিল। পরে যা শুনেছি, তার সঙ্গে সেই এক ঘণ্টা মিলাতে পারিনি। বাগদাদ থেকে ডিপ্লোমেটিক ব্যাগে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গোপনীয়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ইন্দিরা গান্ধীর বার্তা পৌঁছে দিতেন। সেখান থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত এই কাজ করে তিনি লন্ডনে বদলি হয়ে আসেন। লন্ডনে এসেও তিনি তার কাজ অব্যাহত রাখেন। [চলবে]

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর