শিরোনাম
শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওষুধ আনতে দুই সিটিকে আদেশ স্থানীয় সরকার সচিবকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক

মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ সিটি করপোরেশনকেই আমদানির নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে এ আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করতে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মশার ওষুধ আমদানির বিষয়ে গতকাল তিন দফা শুনানি নিয়ে বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

এদিন আদালতের তলবে হাজির হয়ে এ বিষয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক তুলে ধরেন স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে তৌফিক ইনাম টিপু আদালতে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ।

হাই কোর্ট আদেশে বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ মশা মারার ওষুধ দ্রুত আনার ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে লাইসেন্স ও ক্লিয়ারেন্সসহ সার্বিক সহযোগিতা দেবে। একই সঙ্গে দেশের সব হাসপাতালে একজন সহযোগী অধ্যাপককে ডেঙ্গু চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্ব দিতে হবে। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে আদেশে।

হাই কোর্টের আদেশে আরও বলা হয়েছে, ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট যাতে স্বল্পমূল্যে দ্রুত সরবরাহ করা হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে যাবেন, মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের সবার চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও নিশ্চিত করতে বলেছে আদালত। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও ওষুধ আমদানি করতে পারে বলে আদেশে বলা হয়। এর আগে মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ আনতে কত দিন লাগবে, তা গত ২৫ জুলাই জানতে চেয়েছিল হাই কোর্ট। দুই সিটি করপোরেশন ও রাষ্ট্রপক্ষকে সুনির্দিষ্টভাবে তা হলফনামা আকারে জানাতে বলা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে আদালতের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মশার ওষুধ আনার দায়িত্ব সরকারের; ছিটানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মশা মারার ওষুধ সিটি করপোরেশনই আনবে। সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। তখন জরুরি পরিস্থিতিতে মশা মারার ওষুধ আনার বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার সচিবকে তলব করে হাই কোর্ট। তাকে বেলা ২টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির হয়ে হেলালুদ্দীন আহমেদ আদালতকে বলেন, ‘অনেকের ধারণা, মশার যে ওষুধটি চলছে সেটা দিয়ে মশা মরছে না। ফলে ২৮ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এলজিইডি, দুই সিটি করপোরেশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে ওষুধ আনবে সিটি করপোরেশন। আমরা টাকাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেব।’ এ সময় হাই কোর্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তারিক-উল হাকিম বলেন, ‘তারা (সিটি করপোরেশন) তো বলছে ভিন্ন কথা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তো দরখাস্ত দিয়ে নির্দেশনা চাইছে, যাতে আপনারা ওষুধ আনেন।’ উত্তর সিটির প্রধার নির্বাহী কর্মকর্তা এ সময় আদালতকে বলেন, ‘নতুন ওষুধের নমুনা আনা হচ্ছে, ইতিমধ্যে তা দেশের পথে রয়েছে।’ বিচারক তখন বলেন, ‘আপনারা বলছেন তারা আনবেন, আর তারা বলছেন আপনারা আনবেন। সরাসরি আপনাদের আনতে অসুবিধা কী? একটা ক্রাইসিস পিরিয়ড চলছে। বলেন আপনারা (সরকার) আনতে পারবেন কি না?’ উত্তরে সচিব বলেন, ‘আমরা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন মিলে দ্রুত ব্যবস্থা করব।’ বিচারক তখন বলেন, ‘আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে। আমাদের জানান, জিটুজি পদ্ধতিতে আনা সম্ভব কি না, আমরা আদেশ দেব।’ পরে আদালত বিকাল ৪টার মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশ দেয় সচিব হেলালুদ্দীনকে।

নির্ধারিত সময়ে আদালতে এসে সচিব জানান, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, মশা মারার জন্য যে কীটনাশক আমদানি করতে হবে, তা উৎপাদিত হয় বেসরকারিভাবে। ফলে সরকারি পর্যায়ে বা জিটুজি পদ্ধতিতে তা আনা সম্ভব নয়। কাজেই দুই সিটি করপোরেশনকেই ওষুধ আমদানি করতে হবে। আমরা দুই সিটি করপোরেশনকে লাইসেন্স ও ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছি। এর পরও যত ধরনের সহযোগিতা করা দরকার, তার সবটুকুই করব ওষুধ আনার ব্যাপারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর