শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজধানীতে বিয়ের আসরে কনের বাবা খুন

মা গুরুতর আহত, যুবক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে বিয়ের আসরে কনের বাবা খুন

আটক যুবক

রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডে এক বিয়ের আসরে কনের বাবা নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন কনের মা ফিরোজা বেগম (৪০)। স্থানীয় সজীব আহমেদ রকি (১৯) নামের এক বখাটের সঙ্গে বিয়ে না দিয়ে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জেরেই সে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে।

পরে স্থানীয়রা বখাটে রকিকে হাতেনাতে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। গুরুতর অবস্থায় বাবা তোলা মিয়াকে (৫৫) প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ। কনের মা ফিরোজা বেগম বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয় ও নিহতের স্বজনরা বলছেন, ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলেই পড়াশোনা করত স্বপ্না এবং বখাটে রকি। তবে এক ক্লাস সিনিয়র ছিল স্বপ্না। স্কুলে যাওয়া-আসার সময় স্বপ্নাকে উত্ত্যক্ত করত রকি। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরপরই স্বপ্নাকে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে পঠিয়ে দেন তোলা মিয়া। এক বছর আগে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এনে এক খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে স্বপ্নাকে বিয়ে দেন অভিভাবকরা। সে স্বামীর সঙ্গে থাকত মিরপুরে। তবে বিয়ের খবর জানতে পেরে রকি আবারও স্বপ্নাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। দিনদুপুরে সে স্বপ্নাকে ফোন দিত। স্বপ্নার স্বামীকেও ফোন করে স্বপ্না সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলত রকি। ফেসবুকে স্বপ্না সম্পর্কে আজেবাজে স্ট্যাটাস দিত। এতে বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায় স্বপ্নার সাজানো সংসার ভেঙে যায়। স্বপ্না চলে আসে মা-বাবার কাছে। তবে রকির উত্ত্যক্তের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকলে তোলা মিয়া হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। ইভ টিজিংয়ের মামলায় এক মাস জেল খেটে আড়াই মাস আগে জামিনে বের হয় রকি। কনের খালা রহিমা বেগম বলেন, তোলা মিয়া সম্পর্কে স্বপ্নার সৎ বাবা। তিন বছর আগে ফিরোজা বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তোলা মিয়া নিজের মেয়ের মতোই স্বপ্নাকে আদর করতেন। এ জন্য তিনি কোনোভাবেই রকির অত্যাচার মেনে নিতে পারছিলেন না। রকির হাত থেকে রক্ষা পেতে দুই দফায় মেয়েকে টাঙ্গাইলে পাঠিয়ে দেন। রকি জেলে যাওয়ার পর আমরা ভাবছিলাম এবার আর হয়তো সে স্বপ্নাকে ডিস্টার্ব করবে না। এ জন্য চট্টগ্রামের এক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করা হয়।

যেভাবে ঘটনা : হাতিরঝিল সংলগ্ন প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউস। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাটকের শুটিং থাকলেও গতকাল কোনো বুকিং না থাকায় মেয়ে স্বপ্নার বিয়ের জন্য দুই ঘণ্টা সময় চেয়ে নিয়েছিলেন তোলা মিয়া। তোলা মিয়া নিজেও প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউস সংলগ্ন লাল মিয়া, খ ম জাহাঙ্গীর, মোখলেসুর রহমানের বাড়ির কেয়ারটেকারের কাজ করতেন। পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মোখলেস মিয়ার টিনশেড বাড়ির একটি কক্ষে। জানা গেছে, প্রিয়াঙ্কা হাউসের নিচতলার একটি কক্ষে বিয়ে হচ্ছিল। মোহাম্মদ আলী নামে এক যুবকের সঙ্গে স্বপ্নার পূর্বনির্ধারিত এ বিয়ে হচ্ছিল। বিয়ে পড়াচ্ছিলেন মগবাজারের কাজী মাওলানা ইব্রাহিম। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ, স্থানীয় কাউন্সিলর মোক্তার সর্দারসহ এলাকার গণ্যমান্য লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

পরে দেখা যায়, শুটিং হাউসের বাইরে অগণিত উৎসুক জনতা। কারণ কিছুক্ষণ আগেই বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এই শুটিং হাউসের নিচ তলার রান্নাঘরে খুন হয়েছেন কনের বাবা তোলা মিয়া, গুরুতর আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কনের মা ফিরোজা। এ সময় ডাইনিং টেবিলে বর পক্ষকে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছিল। রান্নাঘরে খাবারের তদারকি করছিলেন তোলা মিয়া। দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে কনেকে সাজাচ্ছিলেন বিউটিশিয়ান পারভীন সুলতানা। ঘটনা শোনার পর বারবার মূর্ছা যান কনে স্বপ্না। প্রত্যক্ষদর্শী আলআমিন নামের এক যুবক এ প্রতিবেদককে বলছিলেন, সীমানা প্রাচীর পেড়িয়ে রকি শুটিং হাউসে ঢুকে পড়ে। সোজা চলে যায় রান্না ঘরে, যেখানে তোলা মিয়া খাবারের তদারকি করছিলেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রকি উপর্যুপুরি তোলা মিয়াকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। তার চিৎকারে আমি এগিয়ে যাই। এগিয়ে আসেন ফিরোজা বেগম। এ সময় ফিরোজা বেগমকেও ছুরিকাঘাত করে রকি। হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশীদ বলেন, অভিযুক্ত রকিকে আটক করা হয়েছে। তাকে ঢামেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় নেওয়া হয়েছে। রকির বাবার নাম আবদুল বারেক। কুমিল্লা দাউদকান্দির পাঁচগাছিয়ায় তার গ্রামের বাড়ি। মগবাজারের বাটার গলিতে পরিবারের সঙ্গে থাকে রকি। তিনি আরও বলেন, এটা হতে পারে একপক্ষীয় ভালোবাসা। সজীব মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাইত। তবে মেয়ের পরিবারের মত ছিল না। মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে খবর পেয়ে সজীব এসে হামলা চালায়।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তবে আটক রকি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ওই কনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বিয়ে বন্ধ করতেই তিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর