শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
বেসিক ব্যাংকের ক্রেস্ট নেননি অর্থমন্ত্রী

ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত, দেশের বাইরেও যেতে দেওয়া হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত, দেশের বাইরেও যেতে দেওয়া হবে না

‘যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেরত না দিয়ে খেলাপি হয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে লোক লাগানো হবে। তাদের দেশের বাইরেও যেতে দেওয়া হবে না। তাদের ঠিকানা চিহ্নিত করা হবে। এখনো সময় আছে, ব্যাংকের টাকা ফেরত দিন।’ গতকাল সেনাকল্যাণ ভবনে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন  কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আলোচনা সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ, এমডি রফিকুল আলমসহ ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ক্রেস্ট দিতে চাইলে তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখন ক্রেস্ট নেব না। এক বছরে যদি তারা ভালো করতে পারে, তাহলে ক্রেস্ট নেব। আপনারা ভালো করেন, আগামীতে আপনাদের সঙ্গে আমরা পিকনিক করব।’ এ সময় অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে থাকা অন্য অতিথিরাও ক্রেস্ট গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের জন্য দুটো অপশন আছে। হয় প্রফিট করে দেখান, না হয় ব্যাংক বন্ধ করে দিন। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের যেসব শাখা দুই বছর ধরে লোকসানে আছে, সেগুলো চলতি বছরের মধ্যে লাভে না এলে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের ৭২টি শাখায় ২১০০ কর্মকর্তার কী কাজ আমি জানি না। একদিকে বেশি বেতন নিচ্ছেন। বেতন কার কত হবে এটা নিজেরা বসে নতুনভাবে ঠিক করে নিলে লোকসান অনেকটা কমে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক এভাবে ধ্বংস হতে পারে না। এই ব্যাংকটি টিকে থাকবে, নাকি বন্ধ হয়ে যাবে, এটা কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করে। আপনাদের নিজেদের বেতন নিজেদের আয় করে নিতে হবে। এ বছরই লোকসানি শাখাগুলো লাভে আনার চেষ্টা করবেন। তবে আমরা সব সময় এটিকে সরকারি বা জনগণের ব্যাংক হিসেবে নার্সিং করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব।’ মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক আবার ঘুরে দাঁড়াবে আমার সেই বিশ্বাস আছে। এ জন্য রাফ অ্যান্ড টাফ হয়ে কাজটি করে যেতে হবে। অর্থের অভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় না। বন্ধ হয় ম্যানেজমেন্টের কারণে। বেসিক ব্যাংকের মোট লোকসান ৩ হাজার ৬ কোটি টাকা। আমরা ঋণ পুনঃ তফসিলের যে নীতিমালা করেছি, তাতে অনেক টাকা আদায় হবে। তাদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের জন্য ১১ বছর সময় দেওয়া হবে। আমি কারও ঋণ মওকুফ করতে পারব না। তবে লজিস্টিক সাপোর্ট দেব। আপনারা পুরনো ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করুন।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকলে শাস্তি কমবেশি পেতে হবে। ঋণ বিতরণে কোনো কর্মকর্তার অবহেলা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে যেসব খেলাপি ভুল স্বীকার করে আবার ব্যবসা করতে চান, আমরা তাদের ক্ষমা করব। যেসব কর্মকর্তা কাজ করতে চান না তাদের বিরুদ্ধে একবারেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসিক ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আপনারা কী পরিকল্পনা নেবেন সেটা আমাদের কাছে শিগগিরই উপস্থাপন করবেন। সে অনুযায়ী তহবিল কতটুকু ব্যবস্থা করা যায় তা করা হবে। আপনাদের পরিকল্পনার পর আমরা আমাদের কাজ করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর