শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঠাঁই নেই হাসপাতালে

আকতারুজ্জামান

ঠাঁই নেই হাসপাতালে

ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় বেড়েছে রোগীর ভিড়। রোগীর ভিড়ে যেন ঠাঁই নেই হাসপাতালগুলোয়। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী দিন দিন বাড়ছে। হাসপাতালের প্রায় সব ওয়ার্ডেই এখন ডেঙ্গু রোগী। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন ডেঙ্গু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ছুটে আসছে মানুষ। সরকারি হাসপাতালগুলোয় রক্ত পরীক্ষা করতে এসে কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগীরা। কোনো কোনো টেস্ট বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেও করানোর অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। রোগীদের জায়গা না হওয়ায় সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতরে ও বারান্দায় বেড পাওয়া অতিরিক্ত রোগীদের সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে বেড না পেয়ে অনেক রোগী স্থান নিয়েছেন মেঝে, ব্যালকনি, টয়লেটের সামনে, ক্যান্টিনের সামনে, সিঁড়িসহ অন্যান্য স্থানেও। বিপুলসংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্তের চিকিৎসাসেবা দিতে নাভিশ্বাস উঠছে চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৯৯৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৯১ জন। সব মিলে সারা দেশে ১ হাজার ৬৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তথ্যমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দিনে ভর্তি হয়েছেন ১২৩ জন ডেঙ্গু রোগী। মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩৫, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৩, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১১৮, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৯২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৯, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৪, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৫৬, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩৫, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯, বারডেম হাসপাতালে ১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। সারা দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৮২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা শেষে গতকাল সারা দেশের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১৪ হাজার ৬৩৯ রোগী। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘হাসপাতালের সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগী। এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। এখনই এমন পরিস্থিতি। এরপর রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেব তা আমার জানা নেই।’ এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, গত মাসে সারা দেশে ১৫ হাজার ৬৪৩ জন ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। চলতি মাসের মাত্র দুই দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৪০৫ জন। জানা গেছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়া অন্য রোগীরাও বিপাকে পড়েছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন জানান, ‘হাসপাতালটিতে স্বাভাবিক অন্যান্য রোগী দেখা বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি বিভাগে রোগী দেখা চালু রয়েছে।’ দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসুস্থ শিশুকে নিয়ে অবস্থান করছেন অভিভাবকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে দেখা গেছে দ্বিতীয় ভবনের পাঁচ থেকে আট তলার মেডিসিন বিভাগ জুড়ে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বাড়ার ঘটনায় সাধারণ জ্বরে আক্রান্তরাও হাসপাতালে ভিড় করছেন। অনেক রোগী জানান, ডেঙ্গুজ্বর পরীক্ষার জন্য এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্ট বাইরের ডায়াগনস্টিক থেকে করতে হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীই আসছেন জ্বর নিয়ে। হাসপাতালের ভিতরে দেখা যায়, সব ওয়ার্ডই রোগীতে ভর্তি। ওয়ার্ডের বাইরেও যত্রতত্র রোগী শুয়ে আছেন। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরের টেস্ট ফ্রি ঘোষণার পর সাধারণ জ্বর, মাথাব্যথা নিয়েও হাসপাতালে ছুটছে মানুষ, ভিড় করছে রক্ত পরীক্ষার জন্য। এতে চাপ পড়ছে প্যাথলজি বিভাগে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্যাথলজি বিভাগে চাপ বাড়ার পর জরুরি ভিত্তিতে যেসব রোগীর প্যাথলজির রিপোর্ট দরকার, সেসব পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে। এতে অন্য রোগীরাও সমস্যায় পড়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর