যে কোনো মূল্যে স্বপ্নার বিয়ে ঠেকানোই লক্ষ্য ছিল সজীব আহমেদ রকির (২২)। বিয়ের আসর থেকে স্বপ্নাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে নিয়েছিলেন ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ চাকু। তবে প্রথমে কনে স্বপ্না এবং পরে বাবা তোলা মিয়া (৫৫) এগিয়ে এলে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন। মা ফিরোজা বেগম বাধা দেওয়ায় তার তলপেটেও ছুরি ঢুকিয়ে দেয় রকি। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ দিদার হোসাইনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বিয়ের আসরে কনের বাবাকে খুনের অভিযোগে আটক সজীব আহমেদ রকি। তিনি বলেছেন, ‘স্বপ্নাকে তুলে নিতে গিয়েছিলাম’। এর আগে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছেও এমন তথ্য দেন রকি। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বখাটে রকি  মোটরসাইকেলের গ্যারেজে কাজ করতেন। স্বপ্নার প্রতি ভালোবাসা ছিল একপক্ষীয়। সূত্র বলছে, আগে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকেই রাজধানীর কারওয়ান বাজার বিজিএমইএ ভবনের দক্ষিণ পাশের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন রকি। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নিরাপত্তার স্বার্থে বর আসার আগেই প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউসের দুটো ফটকে তালা মেরে রাখা হয়েছিল। এর পরও সবাইকে ফাঁকি দিয়ে সীমানা প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ভিতরে ঢোকেন রকি।  সোজা চলে যান দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে। ওই কক্ষে স্থানীয় বিউটিশিয়ান পারভীন সুলতানা স্বপ্নাকে সাজাচ্ছিলেন। তখন স্বপ্নাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন রকি। এ সময় স্বপ্নার চিৎকারে নিচের কক্ষে থাকা তার বাবা-মা দোতলায় যান। এগিয়ে আসেন প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউসের নিরাপত্তাকর্মী আল আমিনসহ ৩/৪ জন। তারা রকিকে জোর করে টেনে দ্বিতীয় তলা থেকে নামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বপ্নার বাবা তোলা মিয়ার বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করেন। স্বপ্নার মা ফিরোজা বেগম এগিয়ে এলে রকির ছুরি থেকে রক্ষা পাননি তিনিও। স্বপ্নার বরাত দিয়ে ওসি আবদুর রশিদ বলেন, রাস্তায় দেখলেই রকি তাকে জোরপূর্বক আটকিয়ে কথা বলতেন। তার কাছ থেকে রক্ষা পেতে তার বাবা-মা স্বপ্নাকে দুই দফায় টাঙ্গাইলে রেখেছিলেন। লেখাপড়াও তার বন্ধ হয়ে যায়। রকির কারণে তার আপন খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যায় মাত্র ১৫ দিনে। তার জীবনটাকে বিষিয়ে তুলছিলেন রকি। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিয়ের আসরে ঢুকে কনের বাবা তোলা মিয়াকে খুন এবং কনের মাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে রকি। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর স্থানীয়দের উদ্যোগে ওই আসরেই বিয়ে হয় স্বপ্না ও আলীর।