সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও ওহাইওতে বন্দুকধারীর হামলা, নিহত ৩০

প্রতিদিন ডেস্ক

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একাধিক বন্দুকধারী যুক্তরাষ্ট্রের দুই স্থানে হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে টেক্সাসে চালানো হামলায় ২০ জন এবং ওহাইওতে ১০ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় টেক্সাসের একটি সুপার সেন্টারে এবং রাত ১টার দিকে ওহাইওর একটি পানশালায় এ হামলা চালানো হয়। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এল পাসো সিটির ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টারে এক বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে ২০ জন নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৪ জন। শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো সীমান্ত থেকে কয়েক মাইল দূরে এ ঘটনা ঘটে। এ হামলার সময় সুপার সেন্টারে বহু ক্রেতার ভিড় ছিল। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ওই শপিং মলে হামলাটি দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী ছিল। দফায় দফায় গণহারে গুলি ছোড়া হয়। এতে একের পর এক লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট ২০ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে স্পষ্ট ছিল না হামলাটিতে কতজন হতাহত হয়েছেন। এমনকি কয়জন বন্দুকধারী গুলি চালিয়েছে, তাও পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল না। হামলাটিকে দেশের ইতিহাসে মারাত্মক ঘটনাগুলোর একটি উল্লেখ করে গ্রেগ অ্যাবোট বলেন, মার্কিন-মেক্সিকান সীমানা থেকে কয়েক মাইল দূরে সিলো ভিস্তা শপিং মলের পাশে এই গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এর আগে বেলা ১টার দিকে টুইটারে দেশটির পুলিশ জানায়, একাধিক সক্রিয় বন্দুকধারীর হামলা হয়েছে ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টারে। নিরাপত্তার জন্য এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় সবাইকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানায় পুলিশ। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বলছে, গুলিতে আহত হয়ে স্থানীয় দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এর মধ্যে ডেল সল মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন ১১ জন। আর ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার অব এল পাসোতে ভর্তি বাকি ১১ জন। দুই হাসপাতালের মুখপাত্র ভিক্টর গোয়েরেরো এবং রায়ান মিয়েলক সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। টেক্সাস পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক শ্বেতাঙ্গকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ওই ব্যক্তি একাই এ হত্যাকা  চালিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটককৃত ব্যক্তির নাম প্যাটট্রিক ক্রসিয়াস (২১)। তিনি ডালাসের বাসিন্দা। টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটনের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, গোলাগুলিতে অন্তত ১৫-২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কজন। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।

হামলাকারী কে : বন্দুক হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক তরুণ প্যাট্রিক ক্রসিয়াস ডালাস এলাকার অ্যালেন শহরের বাসিন্দা। ম্যাক কিন্নি অঞ্চলের কলিন্স কলেজে পড়াশোনা করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এ হামলার উদ্দেশ্য জানতে কয়েক দিন আগে অনলাইনে পোস্ট করা একটি লেখা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ওই লেখাটি ক্রসিয়াসের লেখা বলে ধারণা করা হলেও সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী এল পাসো থেকে ৬৫০ মাইল পূর্বে অবস্থিত অ্যালেন শহরের বাসিন্দা। ম্যাক কিন্নির জেলা প্রেসিডেন্ট ড. নেইল ম্যাটকিন জানিয়েছেন, ২০১৭-২০১৯ সাল পর্যন্ত কলিন কলেজে পড়াশোনা করেছে ওই তরুণ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘টেক্সাসের এল পাসো শহরে আজ বন্দুক হামলার খবর শুনে আমরা খুবই দুঃখিত ও হতাশ। কলিন কলেজে ২০১৭ সালের শরৎ থেকে ২০১৯ সালের বসন্ত পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে প্যাট্রিক ক্রসিয়াস’। তিনি জানান, এ হামলার তদন্তে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তত রয়েছে কলিন কলেজ।

আরেক খবরে বলা হয়েছে, যে যুবককে আটক করা হয়েছে তিনি হামলার আগে একটি ইশতেহার প্রকাশ করেছিলেন। যেখান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের অনুসারী তিনি। মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইম তাদের অনলাইনে প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এল পাসোর হত্যাকা  ক্রাইস্টচার্চ গণহত্যা থেকে অনুপ্রাণিত। কর্তৃপক্ষ হামলার ঘটনা জানার ঠিক ১৯ মিনিট আগে অনলাইনে অভিবাসনবিরোধী বিদ্বেষমূলক একটি ইশতেহার প্রকাশ পায়। ইশতেহারে টেক্সাসে স্প্যানিশ ভাষাভাষী ল্যাতিন আমেরিকার যেসব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে তাদের ওপর আক্রমণের কথা বলা হয়েছে। ইশতেহারের মাধ্যমে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, বিদেশিদের কারণে শ্বেতাঙ্গ মানুষরা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে দিনকে দিন। তদন্ত কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ৩০০ শব্দের ওই ইশতেহার যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হতে চাচ্ছে, এটা কি সেই ব্যক্তি লিখেছেন যে মেক্সিকো সীমান্ত লাগোয়া টেক্সাসের এল পাসোর ওই শপিং মলে বন্দুক হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা এবং ২৪ জনকে আহত করেছেন? গ্রেফতার ২১ বছর বয়সী হামলাকারী অ্যালেনের বাসিন্দা প্যাট্রিক ক্রসিয়াসকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তার বাড়ি থেকে এল পাসোতে অবস্থিত ওই শপিং মলেরও দূরত্ব ১০ ঘণ্টারও বেশি। তদন্ত কর্মকর্তারা এটা বোঝার চেষ্টা করছেন, কী কারণে তিনি এতদূর থেকে এসে একটা জনবহুল শপিং মলে হামলা চালালেন। হামলাকারী ক্রসিয়াসের সঙ্গে যুক্ত ওই ইশতেহারে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য হামলা এবং বিদ্রƒপ করে বলা হচ্ছে, ‘যদি আমরা বেশি মানুষের কাছ থেকে মুক্ত হতে পারি তাহলে আমাদের জীবন হবে আরও সুন্দর এবং টেকসই।’ স্বাক্ষরবিহীন ওই ইশতেহারে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘দ্য ইনকনভেনিয়েন্ট ট্রুথ’ বা ঝামেলাপূর্ণ সত্য। যার মাধ্যমে গত মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলা করে ৫১ জনকে হত্যাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ক্রাইস্টচার্চে হামলাকারী বেন্টন ট্যারান্ট মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনার ফেসবুকে লাইভ (সরাসরি সম্প্রচার) করেন। তিনিও একটি ইশতেহার প্রকাশ করেন হামলার আগে, যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’। এ ছাড়াও এই দুই হামলাকারী দুজনই ব্যবহার করেছেন স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। আর একটি বড় ব্যাপার হলো তারা কাউকে সঙ্গে নয়, হামলা চালিয়েছেন একাই এবং তা জনবহুল এলাকায়। তারা দুজনই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে চরম উগ্রপন্থি।

ওহাইওতে হামলা : যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ওহাইওর ডেটনে একটি পানশালার বাইরে এক বন্দুকধারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে ১০ জন এবং পরে পুলিশের পাল্টা গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত অন্তত ১৬ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেটন পুলিশের অ্যাসিসট্যান্ট চিফ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ম্যাট কারপার। স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১টার দিকে ওই বন্দুক হামলার পর পুলিশ ই-ফিফথ স্ট্রিট এবং ওয়েইন এভিনিউয়ের আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে। এফবিআইর সদস্যরাও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন; জরুরি সেবার গাড়িগুলোও সেখানে অবস্থান নেয়। খবরে বলা হয়, ডেটনের ই-ফিফথ স্ট্রিটে নেড পেপারস নামের একটি পানশালার বাইরে রাস্তায় বেশ কয়েকটি গুলির শব্দের পর আতঙ্কিত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা কয়েকটি ভিডিওতে। হতাহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতেও দেখা গেছে। ঘটনার পরপরই ডেটনের পুলিশ এক টুইটার বার্তায় লোকজনকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়। পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাট কারপার জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই টহল পুলিশের সদস্যরা অল্প সময়েই বন্দুকধারীকে হত্যা করে। তবে হামলাকারীর বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি। টেক্সাসে ওয়ালমার্টের দোকানে এক বন্দুকধারীর হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওহাইওতে হামলার ঘটনা ঘটল।

এ হামলা কাপুরুষোচিত : যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি শপিং মলে বন্দুকধারীর গুলিতে ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কাপুরুষোচিত কাজ বলে মন্তব্য করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজের মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘টেক্সাসের এল পাসোর আজকের ঘটনা শুধুই দুঃখজনক নয়, এটি একটি কাপুরুষোচিত কাজ। দেশের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমি আজকের এই ঘৃণ্য কাজের নিন্দা জানাই।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এমন কোনো কারণ বা অজুহাত নেই, যা কখনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যায় ন্যায্যতা দেয়।

এফবিআইয়ের তদন্ত শুরু : এল পাসো শহরের একটি শপিং মলে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই। টেক্সাস কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী অভ্যন্তরীণ তদন্ত করবে এল পাসো এফবিআই। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর নিশ্চিত করেছে।

সর্বশেষ খবর