সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ধামাচাপা পড়েছে প্রিয়া সাহা বিতর্ক

মামলা হয়নি, ফিরছেনও না

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ধামাচাপা পড়েছে প্রিয়া সাহা বিতর্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করে বিতর্কিত প্রিয়া সাহা ইস্যু ধামাচাপা পড়তে যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বৈদেশিক বন্ধুত্বপূর্ণ অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে কঠোর না হওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যেই প্রিয়া সাহাকে গ্রেফতার না করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে মার্কিন সরকারকে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আবেদন হলেও সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি। অবশ্য প্রিয়া সাহাও সহসাই দেশে ফিরছেন না। নতুন করে যেন কোনো উত্তেজনা তৈরি না হয়, সে জন্য দেশে ফিরতে সরকারের গ্রিন সিগন্যালের জন্যই প্রিয়া সাহা অপেক্ষায় থাকছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠরা। প্রিয়া সাহা গত ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন। তার ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশের বিভিন্ন মহলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যেই প্রিয়া সাহা ‘বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ’ করেছেন। প্রিয়া সাহা ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ’ করেছেন বলে মন্তব্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রিয়া সাহা তার আত্মপক্ষ সমর্থনে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত ও মার্কিন সংস্থা আইআরআইয়ের উদ্ধৃতি দিলেও তা প্রত্যাখাত হয়েছে দুই ক্ষেত্রেই। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকেই প্রিয়া সাহার বক্তব্য অসত্য জানানো হয়েছে। তাকে করা হয়েছে বহিষ্কার।

কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পক্ষে দল ভারী হতে দেখা যাচ্ছে। তার নিরাপত্তার দাবিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের বাইরে বিক্ষোভ চেষ্টা করেছে বিজেপির একটি অংশ। বিজেপির উদ্বাস্তু বিষয়ক শাখার পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে এ বিক্ষোভ চেষ্টা নস্যাতে দুজনকে গ্রেফতার করতে হয়েছে ভারতীয় পুলিশকে।

অন্যদিকে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের নির্যাতিত, বিপন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়ছেন প্রিয়া সাহা। যাতে সংখ্যালঘুদের আর দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করতে না হয়। প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যা বলেছেন, তাকে সর্বাংশে সত্য বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। প্রিয়া সাহার বিষয়ে নরম সুর পাওয়া গেছে সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারকের মুখেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আমরা তার বক্তব্যে দুঃখিত হয়েছি। যা বলেছেন তা একেবারে ভিত্তিহীন ছিল। তার কথা আমাদের খুব খটকা লেগেছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা পৃথিবীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা মডেল। সব নাগরিকের সমান অধিকার আছে। তাই প্রিয়া সাহার অবস্থানও বিবেচনা করা হবে। আমরা হুট করে কোনো কাজ করব না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ ইস্যুতে দেওয়া সর্বশেষ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, প্রিয়া সাহা কারও না কারও ইন্ধনে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, সরকার তা খতিয়ে দেখছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পিছনে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ষড়যন্ত্র থাকার দাবি করেছেন। প্রিয়া সাহাকে ইন্ধন দেওয়ায় বিচারপতি এস কে সিনহাকে ফিরিয়ে এনে শাস্তির দাবি করেছেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর