শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু নিয়ে দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা

জেলা উপজেলায় পেঁৗঁছেছে কীট, দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ, কাজ চলছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গু নিয়ে দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু আবিদা -জয়ীতা রায়

ঈদের ছুটিতে রাজধানী থেকে দেশের জেলা-উপজেলাগুলোতে নিজ বাড়িঘরে যাওয়া শুরু করেছেন নগরবাসী। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু জ্বর যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ঈদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাস, ট্রেন, লঞ্চে মশক ] নিধন ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় হাসপাতালগুলো। এর মধ্যেই জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু শনাক্তকরণে অপরিহার্য উপাদান কিট। এ ছাড়া রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধারাবাহিক সচেতনতা কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এডিস মশার লার্ভা নিধনে নির্মাণাধীন ভবন, হাসপাতাল কমপ্লেক্স, অফিস এবং বাসাবাড়িতে অভিযান শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গেলে বাসার কোনো পাত্রে যেন পানি না জমে সে বিষয়ে নগরবাসীকে সতর্ক করেছে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ মশা নিধনে নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটাচ্ছে সিটি করপোরেশন।  স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের ব্যবস্থাপনার জন্য ৫০ শয্যার ডেঙ্গু ইউনিট চালু করা হয়েছে। দেশের জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে ঈদের ছুটিকালীন ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে গতকাল দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গুর আরডিটি ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ঔষধ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে ৩২টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতনতায় প্রচার চালিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি টাকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ কিট কিনতে পারবে। পরবর্তীতে রোগীর উপসর্গ দেখে পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়লে তারা বিনামূল্যে টেস্ট করাবে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো নির্ধারিত দামে ডেঙ্গু টেস্ট ফি নেবে। ঈদে ঢাকার বাইরে গিয়ে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাদের সেবার সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এর মধ্যেই পর্যাপ্ত কিট আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সহযোগিতায় ৬৪টি জেলার সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট আরএমও, মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৬৪ জেলা সদর হাসপাতালে ঈদে রোগী বাড়ার আশঙ্কায় আগাম ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত এনএস১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। ই-কমার্স প্লাটফর্মের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে ১৬ লাখ স্কাউটকে সম্পৃক্ত করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আক্রান্ত রোগীরা সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে সব ধরনের জটিলতা এড়ানো যায়। মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব। তবে শিশু, গর্ভবতী, বয়স্ক ব্যক্তি, কিডনি ও হৃদরোগীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অবশ্যই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। এডিস মশা যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস, ট্রেন, লঞ্চে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, ট্রেন পরিচ্ছন্ন করার পর মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে অনেক সময় যাত্রী আগেই উঠে পড়ায় মশার ওষুধ স্প্রে করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্মীদের। বাসগুলোতেও মশার স্প্রে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসগুলোতে। লঞ্চেও যাত্রী নামানোর পর পরিষ্কার করে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে কাউকে পাওয়া যায়নি। কমলাপুর রেলস্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, স্টেশনে যাত্রীদের নামিয়ে ‘ওয়াশ ফিড’ থেকে ট্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর মশার ওষুধ ‘স্প্রে’ করে তবেই যাত্রী তোলা হচ্ছে। রাজধানীতে এডিস মশার লার্ভা নির্মূলে এবং পূর্ণাঙ্গ মশা নিধনে কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন। গতকাল এডিস মশার লার্ভা নির্মূলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। উত্তরায় ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। জসীমউদ্দীন রোডে পপুলার হাসপাতালের বেইজমেন্টে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ২ লাখ টাকা এবং উইমেন মেডিকেল কলেজের ভিতরের ড্রেনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই অপরাধে গরিবে নেওয়াজ এভিনিউর লুবনা হাসপাতালকে ৩০ হাজার টাকা এবং উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে জাপান কাগুচি হাসপাতালকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এডিস মশার লার্ভা ও এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় মহাখালী অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেমায়েত হোসেন বারিধারার ১১টি বাড়ির মালিককে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। কারওয়ান বাজার অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান সাতবাড়ি কনস্ট্রাকশন সাইটের ভিতরে এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পান। তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এই সচেতনতা কার্যক্রম বছরব্যাপী চলবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনামূল্যে অ্যারোসল বিতরণ করেছে। ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সুরিটোলা প্রাথমিক ও  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাতে অ্যারোসলের কার্টন তুলে দেন। সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ এর ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এগুলো বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় তমা কনস্ট্রাকশনের সুপারভাইজার মো. সাঈদকে (২৫) সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদ  প্রদান করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদয়ন দেওয়ান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর