শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডিএমপি কমিশনারের বিদায় বেলায় দুই আক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিএমপি কমিশনারের বিদায় বেলায় দুই আক্ষেপ

পুলিশে ৩২ বছরের কর্মজীবনের ইতি টানতে চলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। কর্মজীবনে পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি; শেষ সাড়ে চার বছর ছিলেন ডিএমপি কমিশনার। এই সময়টায় অনেক সাফল্যের দেখা যেমন পেয়েছেন, তেমনি আছে কিছু ব্যর্থতা ও অপ্রাপ্তি। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বিদায় বেলায় গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন সেই সাফল্য-ব্যর্থতার কথা। জঙ্গিবাদ, মাদক, সন্ত্রাস দমনসহ নানা ক্ষেত্রে সফলতার কথা জানালেও দুটি বিষয় নিয়ে আক্ষেপ করেন বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও যানজটমুক্ত ঢাকা শহর গড়তে পারিনি। তবে এর দায় পুলিশের একার নয়। কারণ, এখানে রাস্তা তৈরি করে সরকারের একটা সংস্থা, সিগন্যাল বাতি রক্ষণাবেক্ষণ করে আরেকটি সংস্থা। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেশের মানুষের আইন না মানার প্রবণতা। আরেকটি ব্যর্থতা হলো, জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারলেও শতভাগ সফল হতে পারিনি। থানায় মানুষ যে ধরনের সেবা আশা করে কাক্সিক্ষত সেই লক্ষ্য শতভাগ আমরা পূর্ণ করতে পারিনি।’ পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উপলব্ধি করতে হবে আপনারা জনগণের বন্ধু। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনারা বেতন পান। ক্ষমতার দম্ভ নয়, লাঠি ঘুরিয়ে নয়, সেবা দিয়ে জনগণের আস্থার প্রতীক হওয়ার চেষ্টা করুন। থানাগুলো যেন মানুষের নির্ভরতার প্রতীক হয়।’ ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ডিএমপিতে পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১ হাজার ৬৮০ দিন দায়িত্ব পালন করেছি। আজই (৮ আগস্ট) আমার পুলিশের সর্বশেষ কর্মদিবস। আগামী দিনে এভাবে এই পোশাকে আর দেখা হবে না। হয়তো অন্য কোথাও অন্য কোনো পোশাকে দেখা হবে। জনবান্ধব পুলিশিংয়ের স্বপ্ন নিয়েই ৩২ বছর কাজ করে গেছি। সারা জীবন মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছি। সবকিছুর মধ্যে সফলতা-ব্যর্থতা রয়েছে, তবে চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না।’ ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে ‘স্মরণকালের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি দমনে আমাদের সাফল্য দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে এবং সারা বিশ্ব এটিকে রোল মডেল হিসেবে নিয়েছে। আমরা ভাড়াটিয়াদের ডেটাবেজ তৈরি করেছি। প্রায় ৭২ লাখ নাগরিকের ডেটাবেজ আমাদের সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিআইএমএস) আছে। এ ডেটাবেজের কারণে কোনো অপরাধী পরিচয় গোপন করে ঢাকা শহরে লুকিয়ে থেকে অপরাধ করতে পারছে না।’ তিনি বলেন, ‘ডিএমপিতে ৩৪ হাজার সদস্য রয়েছেন। সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে একটা ছাতার নিচে এনে টিম ডিএমপি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। এ সফলতার পেছনে রয়েছে এই টিম ডিএমপির স্পিরিট।’ পুলিশে দুর্নীতিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্যায়, দুর্নীতি প্রতিটি পেশায়ই কমবেশি আছে। ঢাকা মহানগরে জনগণের যাতে কোনো হয়রানি না হয় সে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করি।’ দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের কাছ থেকে নানাভাবে সহযোগিতা পাওয়ার কথা স্মরণ করে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আছাদুজ্জামান মিয়া। ১৯৬০ সালের ১৪ আগস্ট ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় আছাদুজ্জামান মিয়ার জন্ম। সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। সিলেট, সুনামগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও রেঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার পদে যোগ দেন।

সর্বশেষ খবর