শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

পবিত্র হজ আজ

মোস্তফা কাজল, মিনা (সৌদি আরব) থেকে

পবিত্র হজ আজ

লাখো হাজী আজ আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে দুই হাত তুলে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে গুনাহ মাফের জন্য মিনতি জানাবেন। সমস্বরে বলবেন, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ, আমি হাজির। হে আল্লাহ, আমি হাজির। আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সব নিয়ামত শুধু তোমারই। সব সাম্রাজ্যও তোমার। তোমার কোনো শরিক নেই। এমন ধ্বনিতে আজ মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান। আজ পবিত্র হজ।

পবিত্র হজের প্রধান কর্তব্য হিসেবে এভাবে তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপ মুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজীরা) আজ (৯ জিলহজ সৌদি আরবে) মিনার তাঁবু থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে। কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন। পুরুষ হাজী সাহেবদের পরনে সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় যা ইহরাম হিসেবে পরিচিত। মহিলা হাজীরা পরিধান করবেন ঢিলেঢালা বোরকা। মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি। হজের তিন ফরজের মধ্যে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ উপলক্ষে মক্কা নগরীজুড়ে নেওয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আকাশে টহল দেবে সৌদি আর্মড পুলিশের হেলিকপ্টার। ‘হজ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫২টিরও বেশি দেশ থেকে এবার প্রায় ২৬ লাখ মুসলিম হজ পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৭৮ জন হাজী। ‘আরাফাহ’ এবং ‘আরাফাত’- এই দুটি শব্দই আরবিতে প্রচলিত। আরাফাতের ময়দানটি দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রশস্ত এক বিশাল সমতল মাঠ। এর দক্ষিণ পাশে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড। এই রোডের দক্ষিণ পাশে আবেদি উপত্যকায় মক্কার উম্মুল কোরআন বিশ্ববিদ্যালয়। আরাফাতের উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও এক হাজার মিটার বিস্তৃত। হজের আহকাম পালনের লক্ষ্যে হাজীরা গতকাল ফজরের নামাজের পর মক্কা থেকে কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় পৌঁছান। আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার এক দিন আগে মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত। এই সুন্নত আদায় করতে হজের এক দিন আগে মিনায় যান হাজীরা। এরপর ৯ জিলহজ (বাংলাদেশে ৮ জিলহজ) ‘অকুকে আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন তারা। আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজীরা। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে পাঁচ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় গিয়ে এক সঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে খোলা আকাশের নিচে মাঠে অবস্থান করবেন। শয়তানের ওপর প্রতীকী পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক কঙ্কর বা ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজীরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে পুরুষ হাজীগণ মাথা মু ন (ন্যাড়া) করে গোসল করবেন। তারা ইহরাম বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় ফিরে যাবেন। সেখানে আরও এক বা দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করবেন। মিনায় অবস্থান শেষে আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর যারা মদিনায় যাননি, তারা মদিনায় যাবেন। যারা আগে মদিনায় গেছেন, তারা নিজ নিজ দেশে ফিরবেন। মিনায় জামারাতের (শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর মারার স্থান) কাছে ও পুরো মিনায় আরবি, ইংরেজি, ফারসি, চীনা ও মালয় ভাষার পাশাপাশি এবার বাংলায়ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাজীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো মক্কা নগরীতে আধা সামরিক ও সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হাজীরা পথ হারিয়ে ফেললে স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউট ও হজকর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন এমন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সৌদি হজ মন্ত্রণালয় ও মোয়াচ্ছাসা কার্যালয় সূত্র জানায়, মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজীকে বিনা মূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজীদের খাবারসহ নানা উপহার সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন। জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজীদের পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়। তারা কাল কোরবানি দেবেন। অধিকাংশ হাজী নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহালাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে (আইডিবি)  ৪৯০ রিয়াল জমা দিয়ে কোরবানি দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর