শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
শোক দিবসের স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী

জিয়া ও এরশাদ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিয়া ও এরশাদ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল ছিল অবৈধ। দীর্ঘদিন পরে হলেও দেশের উচ্চ আদালত রায় দিয়ে তাদের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাই তাদের (জিয়া ও এরশাদ) ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি’ বলা যায় না, তারা হলেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক নেতারা যদি তৎকালীন পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারত তাহলে হয়তো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের  আঘাত আসত না। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার আলবদর বাহিনী অনেকেই দেশ ছেড়ে ভেগে গিয়েছিল। অনেকেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল। আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তারা একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুরু করেছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তখনকার অবস্থা বুঝতেই পারেনি। একটা দেশ দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল, শোষিত ছিল তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা হয়েছে। তারা এত সহজে ছাড়বে না। তাদের দোসররা ছিল রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আর তাদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত অব্যাহত থাকবে এই উপলব্ধিটা তখনকার আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতার মধ্যেও আসেনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সঙ্গে জিয়া জড়িত : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের যোগাযোগ ছিল। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছিল যে, তারা জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ইশারা পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনি মোশতাক প্রথমেই জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেছিল। তখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের এমন মনোভাব ছিল যে তাদের কিছুই হবে না। তিনি বলেন, দিনরাত যারা আমাদের বাড়িতে ঘোরাঘুরি করত তারাই খুনি রূপে আবির্ভূত হলো। জিয়াউর রহমান মেজর ছিলেন। তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করা হলো। জিয়াউর রহমান আমাদের পরিবারে ঘনঘন আসতেন এবং আসার সময় খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসতেন যাতে উপরে উঠে মায়ের সঙ্গে গল্প করতে পারেন। মেজর ডালিম, মোস্তাক আহমেদ ওরা সবসময় আমাদের বাসায় আসত।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধান ও সামরিক আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান। বন্দুকের নলের জোরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে জেনারেল জিয়া হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন। এরপর তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কাজেই জিয়া অবৈধ শাসক ছিলেন।

জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত তিনি বলেন, আজকের দিনে এই প্রতিজ্ঞাই আমরা করি যে, পিতা তোমাকে কথা দিলাম, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, এটাই আমাদের অঙ্গীকার। ৪৪ বছর আগের সেই ভয়ংকর, বীভৎস ১৫ আগস্টকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশ থেকে যখন বাইরে যাই, তখন সব ছিল, ফিরে এসে দেখি আমার আর কেউ নেই। তার মাত্র ১৫ দিন আগে আমি আর ছোট বোন রেহানা পরিবার ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলাম। তাই হয়তো বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই বাঁচা বাঁচা না, এ বাঁচা মৃত্যুর চেয়ে কঠিন। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা, ভাই সব একদিনে হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়েছিলাম। সব হারিয়ে পেয়েছিলাম লাখো মানুষ। তাদের আপন করে নিয়েছি। আর আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী মুজিব আদর্শের সৈনিক, তারাই আমাকে আপন করে নিয়েছে। সেখানেই পেয়েছি বাবা-মা ভাইয়ের ভালোবাসা। নিজের আবেগ সামলিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এদেশের মানুষকে মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ করে দিতে হবে। উন্নত জীবন দিতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে আজকে বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সভার শুরুতেই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।  

ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করছেন প্রধানমন্ত্রী-ওবায়দুল কাদের : স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বারবার তার (প্রধানমন্ত্রীর) জীবনের ওপরই বেশি আঘাত আসছে। বারবার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তিনি বলেন, সবকিছু উপেক্ষা করে পিতা মুজিবের আদর্শ বুকে ধারণ করে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা অসীম সাহসে এগিয়ে চলেছেন। তিনি দেশকে উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছেন।

মোশতাক আওয়ামী লীগের লোক ছিল-আমু : আমির হোসেন আমু বলেন, আমাদের নিজেদের একটি প্রশ্ন করতে হবে, খন্দকার মোশতাক কে ছিলেন? মোশতাক আওয়ামী লীগেরই নেতা ছিলেন। এই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হোন। মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে বন্দী করে পরে ৩ নভেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাজেই আমাদের এখনো সতর্ক হতে হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশকে পিছিয়ে দিতেই দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি।

দেশ স্বাধীনের পর সেই কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। তার আগেই ঘাতকের দল তাকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার মতোই লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করেছেন। তিনি দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর