বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

খালেদার প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদার প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেনি। এ মামলায় খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়নি এটা ঠিক, কিন্তু তার প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় এ হামলা করা হয়েছিল। ঘটনার সময় খালেদা জিয়াই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। আর বাবর ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, অনেক পরে মামলা করে আমরা একটা রায় পেয়েছি। হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্সের আপিলের শুনানির জন্য পেপারবুক যাবে, আশা করি ন্যায়বিচার পাব। গতকাল বিকালে রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।        বিএনপি আগে থেকেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পটভূমি তৈরি করেছিল দাবি করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘটনার (২১ আগস্ট) ও কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বিস্ফোরক পাওয়ার আগে খালেদা জিয়া প্রতিটা প্রোগ্রামের বক্তৃতায় বলতেন, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আমাকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার বক্তৃতা কী ছিল? তিনি বলতেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, জীবনে বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। কারণ ২১ আগস্ট তো তারা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে যা হোক ‘আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর’ বলে একটা কথা আছে। মানুষ বোঝে না আল্লাহর শক্তি কত। যে অভিশাপ তিনি আমার জন্য দিয়েছিলেন, সেটা এখন তার কপালে জুটে গেছে। এটা বাস্তব অভিজ্ঞতা। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বেঁচে থাকার কথা নয়। অনেক ছোট ছোট ঘটনা আমি জানি। যারা হামলা করেছে তারা এক জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে ফোন করেছে যে আমি মারা গেছি কিনা। তিনি বলেন, বোধহয় খালেদা জিয়ার তৈরি করা ছিল যে আমি মরলে পরে একটা কন্ডোলেন্স (শোক বার্তা) জানাবেন। সেটাও না কি তার প্রস্তুত করা ছিল। কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন। ওরা ভাবেনি যে বেঁচে থাকব। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচার তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, শেখ হাসিনা হ্যান্ডব্যাগে গ্রেনেড এনে নিজে মেরেছে। যেন আমরা সুইসাইড করতে গিয়েছি। আমি এক্সপার্ট হলাম কবে, ওরা কী না পারে? মিথ্যা অপবাদ গ্রাম থেকে শুরু করে এমনকি স্কুলের মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। অতগুলো গ্রেনেড হাতে করে নিয়ে যাওয়া সোজা কথা নয়। তিনি বলেন, আমরা মঞ্চে উঠেছি বক্তৃতা করেছি, সবই রেকর্ড করা। এর মাঝেই আমরা নাকি বোমাও মেরেছি, এতগুলো গ্রেনেড সেগুলো আমরাই মেরেছি! এগুলো যারা বলে তারা কী না পারে! ঘটনার বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমি সেখানে গেলাম, বক্তব্য দিয়ে শেষ করলাম সে সময় ফটোগ্রাফার গোর্কি এসে বলল- আপা আমি ছবি নিতে পারিনি। যেহেতু গোর্কির বাবাকে আমি চিনতাম, সেহেতু ছবি তুলতে রাজি হলাম। তখন ছবি তুলতে গিয়েই কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ানো। এরই মধ্যে গ্রেনেড হামলা শুরু হয়ে গেল। তখনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে যারা ছিল তারা আমাকে টেনে বসিয়ে দিল। তারপর একটার পর একটা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে। তখন গ্রেনেডের স্পিন্টার এসে হানিফ ভাইয়ের গায়ে লাগছে আর তার রক্ত আমার ওপর গড়িয়ে পড়ছে। তারপর আবার একটার পর একটা গ্রেনেড মারতেই থাকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সাংবাদিকরা অনেক কিছু বের করে এনেছেন। এটিও বের করতে পারেন, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ৫ নম্বর সড়কে তার শ্বশুরবাড়িতে আগের ১০ মাস থাকত, ঠিক ১ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টের বাসায় কেন চলে যায়? ওই সময় ওখানে বসে বসে তারেক রহমান কী কাজ করছিল সে বিষয়ে একটু খোঁজ করেন। নিজের জীবনের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন থেকে রাজনীতিতে পা দিয়েছি সেদিন থেকে বার বার মৃত্যুর সামনা-সামনি হয়েছি। যেদিন থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া শুরু করেছি সেদিন থেকে বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছি। আর এই বাধা প্রতিহত করতে গিয়ে আমার নেতা-কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগস্ট মাস এলেই যেন অশনি সংকেত নিয়ে আসে। বার বার হামলা হয়েছে। বার বার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাকে মানবঢাল হয়ে রক্ষা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘটনার পর সবার ধারণা ছিল আমি মারা গেছি। এরপর যখন আমি নেমে গাড়িতে উঠতে যাব তখন আবার আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলো। তখন কোনোরকমে আমি প্রাণে বেঁচে যাই। তিনি বলেন, আমি ওই এলাকা ছেড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় লাঠিচার্জ। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে পানি দিয়ে আলামত মুছে ফেলা হয়। আমি জানতে পেরে নানককে (জাহাঙ্গীর কবীর নানক) বলি, আলামত নষ্ট করছে তোমরা ওখানে যাও। আমাদের নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলার স্থলগুলোতে লাল পতাকা পুঁতে আলামত রক্ষার চেষ্টা করে। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল। সেটি সেনা অফিসার নিয়ে যায়। সেটা রাখতে চেয়েছিল বলে সে চাকরি হারায়। কোনো আলামত না রাখার চেষ্টা তারা করেছিল। এ হামলা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, অজ্ঞাতনামা দুজন যে মারা গেল তাদের খবর কেউ নেয়নি, লাশও কেউ নেয়নি। এখন ধীরে ধীরে সবই বের হচ্ছে। কীভাবে ওই জজ মিয়াকে নিয়ে এসেছে। একজন সাধারণ মানুষকে নিয়ে এসে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় হাই কোর্টের বিচারপতি জয়নাল আবেদিনকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে। তারা ফরমায়েশি রিপোর্ট দেয়। সাধারণ মানুষ ধরে এনে জজ মিয়াকে আসামি করে আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রের হোতা হিসেবে হাজির করে নাটক সাজানো হয়। এখন আস্তে আস্তে সবই বের হচ্ছে। সাধারণ গ্রামের মানুষ সে এত গ্রেনেড কোথা থেকে কিনবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেন সেদিন র‌্যালি করতে গিয়েছিলাম। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হজরত শাহজালালের দরগায় গ্রেনেড হামলা হয়। আর সেই সময় গোপালগঞ্জে আমাদের ছাত্রলীগের এক নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং এ রকম অগণিত নেতা-কর্মীর ওপর প্রতিনিয়ত হামলা হয়, আর তাদের হত্যা করা হয়। এসব সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে এবং ওই গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা শান্তির মিছিল করতে চেয়েছিলাম এবং একটি র‌্যালি করতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমরা যে জায়গায় মিছিলটা করতে চেয়েছিলাম সে জায়গায় আমাদের অনুমতি দেয়নি। পরে মাইকিং করে আমরা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই ব্যবস্থা নেই। এরপর ২০ আগস্ট রাত ১২টার দিকে একটা অনুমতির চিঠি পাঠানো হয় আওয়ামী লীগ অফিসে। সেই চিঠিটা তখন কে খুলবে আর কে দেখবে আর কে ব্যবস্থা নেবে। এটা ছিল তাদের একটা চাল। পরে আমরা যেখানে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম সেখানেই সমাবেশ করেছি। আমাদের ভলান্টিয়ার এবং নেতা-কর্মীদের সেদিন কাউকে পাশের ছাদে উঠতে দেয়নি। সেদিন কোনো পুলিশও আমাদের নেতা-কর্মীদের সমাবেশে যেতে বাধা দেয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, ওই দিন বাসায় পৌঁছে আমি সবার খোঁজ নেওয়া শুরু করলাম। আহতদের উদ্ধার করতে কাউকে আসতে দেওয়া হয়নি। ঢাকা মেডিকেলে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছিল। আমাদের যারা সমর্থক তারাই সেদিন কাজ করেছে, আমাদের লোকজন রক্ত দিয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি সারা ঢাকা শহরের হাসপাতালের খোঁজ নিয়েছি। আমি খোঁজে খোঁজে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, পরে বিদেশে পাঠিয়েছি। শান্তিনগরের ক্লিনিকে সাহারা আপাকে খুঁজে পেলাম। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং দলের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন- উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।

সর্বশেষ খবর