সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

তবুও দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেও পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতায় উৎপাদনে যেতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। বছরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদার মৌসুমেও প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে। কেন্দ্র বসে থাকলেও এগুলোর ভাড়া গুনতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে বিদ্যুৎ খাতে লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েই চলেছে। ক্ষতি কমাতে সমন্বয়ের নামে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। এতে বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে আর কোনো নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন না দিতে সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল। তারপরও বিনা দরপত্রে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে’ একের পর এক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বিনিয়োগ না বাড়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে না। একইসঙ্গে সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে অনেক এলাকায় প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে চাহিদার লাগাম টেনে রাখা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত চাহিদা যতটুকু ততটুকু বিদ্যুৎও উৎপাদন করে বিক্রি করা যাচ্ছে না। অথচ কেন্দ্র বসে থাকলেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে সরকারকে। সরকারি কেন্দ্রের ভাড়া না লাগলেও বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিটি ১০০ মেগাওয়াট একটি  কেন্দ্রের জন্য বছরে শুধু ভাড়াই গুনতে হয় প্রায় ৯০ কোটি টাকা। উৎপাদন বন্ধ রাখলেও এসব কেন্দ্রের মালিকপক্ষ ঠিকই ভাড়া পায়, বড় অঙ্কের ভর্তুকি গুনতে হয় সরকারকে।

বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৩৪টি। স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৮ হাজার ৯৬৯  মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি কেন্দ্রের ক্ষমতা ৯ হাজার ৪৬২ মেগাওয়াট যা মোট ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আর এই সর্বোচ্চ চাহিদার সময় দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৮ হাজার  (ডে পিক) থেকে ১২ হাজার (ইভনিং পিক) মেগাওয়াট। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় চলতি মাসের ৫ তারিখ। সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকছে। অন্য সময় অলস থাকছে অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র। আর উৎপাদিত বিদ্যুতের এখনো ৫৫-৬০ ভাগ আসছে সরকারি কেন্দ্র থেকে। বাকি ৪০-৪৫ ভাগ উৎপাদন করছে বেসরকারি কেন্দ্র। অলস থাকছে অর্ধেকের বেশি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে তাদের নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। এই পরিস্থিতিতেও সম্প্রতি আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভিত্তিক দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে দুই প্রতিষ্ঠানকে। একটি ৫৮৪ মেগাওয়াট, অপরটি ৪৫০ মেগাওয়াটের। যদিও পাওয়ার সেলের প্রতিবেদন বলছে, বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা (পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্লান) অনুযায়ী ২০৩০ সাল পর্যন্ত যতটুকু বিদ্যুৎ দরকার তা উৎপাদনে চুক্তি হওয়া এবং নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাইরে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজন নেই। তখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকবে ২৯ হাজার ৬১৯ মেগাওয়াট। চুক্তি হওয়া ও নির্মাণাধীন কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসলে ক্ষমতা হবে ৩৭ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা মেটানোর পরও সাত হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্র বসে থাকবে। এতে রক্ষণাবেক্ষণের কাজও চালানো যাবে।

পিডিবির চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ বলেন, এখন এলএনজিভিত্তিক যে  কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে তা মহাপরিকল্পনার মধ্য মেয়াদি লক্ষ্য মাত্রার অংশ। সময়ের সঙ্গে পরিকল্পনা হালনাগাদ করা হচ্ছে। যদিও মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, মধ্যমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণে ২০১১-১৭ সালের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়। ২০২৬ সালের মধ্যে এগুলো উৎপাদনে আসার কথা।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা যথাযথ নয়। আর যা আছে তাও কখনো অনুসরণ করা হয়নি। কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি বাছাই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কিন্তু সেটা কখনো বিবেচনা করা হয়নি। ২৫ শতাংশের বেশি পিকিং পাওয়ার প্লান্ট থাকা উচিত নয়। এখানে ৫০ ভাগই পিকিং প্লান্ট। একাধারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে, সেটা ব্যবহারের সক্ষমতা আছে কিনা সেটা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। সাশ্রয়ী মূল্যের বেজপ্লান্ট বন্ধ রেখে বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক ছোট ছোট কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। এখানে বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ফলে প্রতি বছর বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে ভর্তুকি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর