মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

খালেদার মুক্তি নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় তৃণমূলে হতাশা

মাহমুদ আজহার

খালেদার মুক্তি নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় তৃণমূলে হতাশা

আইনি প্রক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আশা দেখছে না বিএনপি। তারপরও দলটির মাঠের আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি নেই। কী করবে বিএনপি তারও নেই কোনো দিক-নির্দেশনা। এ নিয়ে ‘চরম’ হতাশ বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। প্রায় ৭৫ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ৫৬৭ দিন ধরে কারাগারে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, দুর্বার আন্দোলন ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি মিলবে না। রাজপথ গরম হলে জামিন প্রক্রিয়াও তরান্বিত হবে। তবে দলের হাইকমান্ড কী করবে তার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনি। ঈদের আগে যে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল তা-ও বন্ধ রয়েছে। নতুন করে শুরু হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরও শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চলবে। পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতিও চলছে। তবে আন্দোলনে যাওয়ার আগে দল গোছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোও গোছানোর কাজ চলছে। বিএনপির সাংগঠনিক জেলা কমিটিগুলোর গঠন প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী মাসে ভারত ও চীন সফর করতে পারে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। এ নিয়ে ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। আজকে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, এ দানব সরকারকে সরাতে হবে।’ তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনি লড়াই আমরা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাব। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি না মিললে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচির বিকল্প নেই।’

জানা যায়, সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন নিয়ে জোরালো কোনো আলোচনা হয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যু ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নিয়ে আলোচনা শেষ করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী এ ফোরাম। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছাত্রদল ইস্যু নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে কী করণীয় তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে তেমন একটা আলোচনা করতে দেখা যায় না। রাজশাহী বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বেগম জিয়া কারাগারে। আমরা বাইরে আছি, এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে? তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারি না। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথের কঠোর কর্মসূচি। কক্সবাজার বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতন্ত্রের নেত্রী কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারিনি, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। এ দায় আমরা কেউই এড়াতে পারি না। কেন্দ্রের উচিত, বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে লক্ষ্য স্থির করে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া। বিএনপির আইনজীবী নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে থাকা ৩৬ মামলার মধ্যে দুটি তার মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের আশা, খুব শিগগিরই জামিনের প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে। আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার ৫টিতে দুর্নীতির অভিযোগে আছে। সেগুলো হলো- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। এ পাঁচটি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। বাকিগুলো হরতাল-অবরোধে নাশকতার মাধ্যমে মানুষ হত্যার অভিযোগ, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, জন্মদিন পালন ও ঋণ খেলাপের অভিযোগে বর্তমান সরকারের সময়ে করা। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা ও অর্থদে র রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। গত ৩১ জুলাই এ মামলায় জামিনের বিষয়ে শুনানি হলেও হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়নি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর