শিরোনাম
বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাকার বাইরে না যাওয়া ডাক্তারদের আচরণে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর নির্দেশ, একনেকে ৫,৪৯৪ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার বাইরে না যাওয়া ডাক্তারদের আচরণে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) রাজধানীর উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ১,৩৯৮ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পসহ মোট ৫,৪৯৪.০৪ কোটি টাকার ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। একনেক চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল             রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারদের পোস্টিং দেওয়ার পরেও সেখানে কাজে যোগ না দেওয়ার ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর নির্দেশ দেন তিনি। একনেক সভা শেষে এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।  

সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প প্রসঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডাক্তাররা যেখানে চাকরি করেন, সেখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলে তবু হয়তো কিছুটা ভালো হতো। যখন চাকরি করেন এক জায়গায়, প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন আরেক জায়গায় বা পার্টটাইম পড়ান আরেক জায়গায়, তখন তারা হাসপাতালে থাকতে পারেন না। বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় ‘খুলনা-চুনকা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক খুলনা চারলেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় কিছু ফুটেজ দেখানো হয়। ফুটেজে দেখা গেছে সড়কে যানবাহন এলোপাতাড়িভাবে রাখা। সড়কও আঁকাবাঁকা। এসব ছবি দেখে প্রধানমন্ত্রী সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর নির্দেশ দেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ড্রাইভার-হেলপারদের জন্য সড়কের পাশে আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। সড়ক রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্যবাহী কোনো যানবাহন বা ট্রাক যাতে ওভারলোড হয়ে সড়কে না ওঠে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে। সড়কের নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। সড়কের পাশে একই ধরনের প্রকল্প যেন অনেকে বাস্তবায়ন না করে এই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভবন নির্মাণের সময় প্রতিটি ভবনে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখার কথা সভায় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন, আগুন লাগলে দমকল বাহিনী পানি পায় না। এর জন্য হলেও ‘ড্রেন ওয়াটার’ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন, কাজে লাগবে। বাড়ির আশপাশের খাল-বিল, পুকুর থাকে, সেগুলো পরিষ্কার করে তাতে পানি সংরক্ষণ করুন, এটা খুব বেশি দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওভারলোডিং সম্পর্কে আমরা সচেতন। আমাদের এখানে গ্রোয়িং ইকোনমি, ওভারলোডিং হয়। ওভারলোডিং কমানোর জেনারেল ইনস্ট্রাকশন এসেছে যে, আপনারা যান, খোঁজখবর নেন। আমরা স্বীকার করি, গ্রোয়িং ইকোনমির এই পর্যায়ে ওভারলোডিং পুরোপুরি এভয়েড করতে পারব না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা হচ্ছে না, হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না। সব কিছুই ওভারলোডিং।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন নগরীর উত্তরা এলাকায় একটি স্বাস্থ্যকর, পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ঢাকা ওয়াসা ২০২১ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পের মধ্যে ৫৩.৭৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, প্রয়োজনীয় জরিপ কার্য চালানো এবং সীমানা পিলারসহ প্রায় ২২ হাজার মিটার কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ করা হবে। সরকার মাস্টার প্ল্যানের সুপারিশের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রায় শত ভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন তুরাগ থানায় প্রয়োজনীয় স্যানিটেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বৈঠকে অনুমোদনপ্রাপ্ত অপর প্রকল্পগুলো হচ্ছে ২৮৯.৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ’, ৫০৯.২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আলী কদম-জ্বালানিপাড়া-করুপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক (১ম সংশোধিত) নির্মাণ’, ২২৬.২২ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপন’, ১৮৩.৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বড়তাকিয়া (আবু তোরাব) থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ এবং ১০০.৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশে (৪.০০ কিলোমিটার) চারলেনে উন্নীতকরণ’।

অপর অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো-  ১০১২.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর ঢাকা সেনানিবাস এলাকার ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ (১ম সংশোধিত), ৩৫২.০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত পানি সম্পদ উন্নয়ন’, ১২৮.১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের ব্যবহার’, ১০৫৭.১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন মানিকগঞ্জ (১ম সংশোধিত)’, ১১৯.৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ (১ম সংশোধিত) এবং ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা অঙ্গ-২ পর্যায় (আইএফএসসি)।

আট প্রতিষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রীর ১৪০ কোটি টাকার অনুদান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আট প্রতিষ্ঠানকে ১৪০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। গতকাল গণভবনে আট প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ কোটি টাকা করে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। এ ছাড়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘরকে ১৫ কোটি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কে পি জে বিশেষায়িত হাসপাতাল ১০ কোটি এবং ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে ১০ কোটি টাকা অনুদান দেন। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

সর্বশেষ খবর