শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কাল

দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতি সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা

মাহমুদ আজহার

দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতি সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা

আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর ৪২ বছরে পা রাখছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে কঠিন সংকট পার করছে দলটি। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ৫৭০ দিন ধরে কারাবন্দী। ৭৪ ঊর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধ খালেদা জিয়া এখন নানা রোগে আক্রান্ত। তার নির্বাচন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত প্রায়। একই অবস্থা তার বড় ছেলে তারেক রহমানেরও। বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১১ বছর ধরে লন্ডনে নির্বাসিত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন আসামি তিনি। এ ছাড়া আরও দুই মামলায় তার ১০ ও ৭ বছরের সাজা হয়েছে। তারও দেশে ফেরা এখন অনিশ্চিত। লন্ডন থেকেই অবশ্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে বিএনপিতে নেতৃত্বশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি দলের প্রধান দুই শীর্ষ নেতা অনুপস্থিত থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ওই দলে নানা সংকট দেখা যায়। দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ বজায় রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপির সাংগঠনিক তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। বিএনপির সামনে লক্ষ্য কী তাও অজানা মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। স্বাভাবিকভাবেই দল পরিচালনা করতে কিছুটা সমস্যা থাকবেই। তারপরও মনে করি, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন বেশি শক্তিশালী। তারেক রহমানের দিক-নির্দেশনায় স্থায়ী কমিটি সবাইকে নিয়ে দল পরিচালনা করছে। সামনে আমাদের চ্যালেঞ্জ তা হলো গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার।’ সূত্রমতে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। তার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলার খড়গ রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে সাত বছর সাজা হয়েছে। অন্যটিতে ১০ বছর। একইভাবে তারেক রহমানের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ  হয়। এ ছাড়া দুর্নীতির এক মামলায় দশ বছর ও অর্থ পাচারের এক মামলায় ৭ বছর কারাদ  হয়। তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। এ অবস্থায় তারেক রহমানের দেশে ফেরাও অনিশ্চিত। এ দিকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৪১ বছরের এই সময়েও বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বরং প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সমস্যার আবর্তে পড়ছে দলটি। সাজা হওয়ার কারণে জিয়া পরিবারের শীর্ষ দুই কর্ণধার বেগম জিয়া ও তারেক রহমান একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে তো বিভাজন ও সন্দেহ-অবিশ্বাস আরও বেড়েছে। খালেদা জিয়া বিহীন বিএনপি ও তার শরিক দল একাধিকবার ভাঙনের মুখে পড়ে। দলের বর্তমান নেতৃত্ব শক্তহাতে হাল ধরায় শেষ পর্যন্ত বিএনপির বড় কোনো সমস্যা হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এত প্রতিকূলতার মধ্যে বিএনপি এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের দাবি আদায় করা।’ দলীয় সূত্রমতে, কাউন্সিল হলেও ৮১টি সাংগঠনিক জেলা বিএনপির কমিটির মধ্যে অর্ধেক পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি দলটি। কেন্দ্রীয় ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি থাকলেও অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয়। জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সামরিক শাসনামলে ক্ষমতায় থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বিএনপি পাঁচবার দেশ শাসনের সুযোগ পায়। বেশ কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে দলটি। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনে দলটি ভাঙনের মুখে পড়লে বেগম জিয়া তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের শক্ত মনোবলের কারণে তা উতরাতে সক্ষম হয়। তবে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি রাজপথের একটি পরীক্ষিত দলে পরিণত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ স্থায়ী কমিটি এবং দলের সর্বস্তরের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যয় হচ্ছে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা। আর এটা করতে হলে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সারা দেশে এখনো বিএনপির অনেক জনসমর্থন রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক কাঠামো অত শক্তিশালী নয়। একের পর এক রাজনৈতিক ‘ভুল’ সিদ্ধান্তে পিছিয়ে পড়ে দলটি। বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জন করা ছিল চরম ভুল সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. প্রণব মুখার্জির সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক বাতিল করা, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে সাড়া না দেওয়া, আরাফাত রহমান কোকোর লাশ বাংলাদেশে আসার পর খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে সান্ত্বনা দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে সাক্ষাতের সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল না। বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানও ছিল বরাবরই অস্পষ্ট। এটাকে ভালো চোখে দেখছে না বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা। এমনকি জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনকে ভালো চোখে দেখছে না আন্তর্জাতিক সম্পদায়। বিএনপি নেতারা অবশ্য বলছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন শক্তিশালী। সরকারের জুলুম, নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি বহুগুণে বেড়ে গেছে। কোনো সভা-সমাবেশও করতে দেওয়া হয় না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের নেতা-কর্মীদের প্রতিশ্রুতি নিতে হবে, তারা অতীতে যেমন জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, ভবিষ্যতেও তারা সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়াতে হবে। অতীতের ভুলভ্রান্তিগুলো সংশোধন করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি : ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কাল সকাল ১০টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতা-কর্মীরা শেরেবাংলা নগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। ভোর ৬টায় নয়াপল্টনসহ দেশের সব বিএনপি কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে র‌্যালি হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশব্যাপী বিএনপির সব ইউনিটে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।

সর্বশেষ খবর