রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

বাকশাল কার্যকর করা গেলে দেশ মর্যাদার আসনে থাকত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাকশাল কার্যকর করা গেলে দেশ মর্যাদার আসনে থাকত

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাকশাল কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশ অনেক আগেই বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে থাকত। কিন্তু তার আগেই বাকশালের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো এবং জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো। গতকাল বিকালে গণভবনে শোকের মাস আগস্টের শেষ দিনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে জাতির পিতার আদর্শের কর্মী হিসেবে সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করতে হবে। আদর্শ না থাকলে সাময়িক নেতা হওয়া গেলেও বেশি দূর এগোনো যায় না।  তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এই কৃষক-শ্রমিকদের একত্রিত করতেই বাকশাল গঠন করা হয়। দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশটাকে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের সাতজন সংসদ সদস্যসহ বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। একটার পর একটা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হয়। পাটের গুদামে আগুন, থানা লুটপাট এবং শেষ পর্যন্ত চক্রান্ত করে দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ভিশনটাকে যখন ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলো, তখন তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন।’ মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তখনো দেশে ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। আমাদের সংগ্রামের পথে অনেক দালাল ছিল। অনেক লোকই ছিল যারা পাকিস্তানপ্রেমী। যারা কখনো বাংলাদেশকে ভালোবাসেনি, বাংলার মানুষের কল্যাণ চায়নি। তারাই যুদ্ধাপরাধী, তারাই এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী। যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আদর্শ না থাকলে নেতা হওয়া যায় না। এ জন্য ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে তাকে নিয়ে লেখাপড়া করার জন্য তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই কারাগারের রোজনামচা বের হয়েছে। তার আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে তার লেখা বইগুলো পড়তে হবে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ার পরামর্শ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ১০ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এক নম্বরে চলে এসেছে দেশ।

মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা কখনো সামনে আসেননি। তিনি কখনো ছবিও তোলেননি। কিন্তু সব সময় বাবার সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করেছেন। জাতির পিতা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ করতেন, আমার মা সব সময় তার পাশে ছায়ার মতো ছিলেন। তিনি বলেন, আমি যদি কিছু শিখে থাকি তাহলে মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি। মায়ের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে জেলখানায় আব্বাকে দেখতে যেতাম। কখনই তিনি মনোবল দুর্বল করেননি। তিনি বলেন, আমার আব্বাকে ৩২ নম্বর বাড়িতে যখন খুন করা হয়, তখন আমার মাকে ঘাতকের দল বলেছিল, আপনি চলেন। তখন আমার মা তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি বলেছিলেন, তোমরা তাকে হত্যা করেছ, আমাকেও কর। বীরের মতো জীবন দিয়ে গেছেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই দিন শুধু আমার বাবা-মাকেই হত্যা করেনি, ছোট রাসেলও রক্ষা পায়নি। কারণ তারা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারের একজনও যেন না বেঁচে থাকে। আমি যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম সে বাড়িতেও হামলা করা হয়েছিল। আমি মাত্র ১৫ দিন আগে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে স্বামীর কর্মস্থলে বিদেশ যাই। এক রাতে আমরা এতিম, রিক্তসিক্ত হয়ে যাই। তিনি বলেন, মাত্র ২০ পাউন্ড হাতে নিয়ে বিদেশ গিয়েছিলাম। থাকার জায়গা ছিল না। ছয় বছর অনেক কষ্টে বিদেশের মাটিতে কাটাতে হয়েছে। মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো আমাদের খবর নেন। যখন দেশে আসি, জিয়াউর রহমান আমাকে ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে দেননি। বাবা-মায়ের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে দোয়া-মিলাদ করেছি। ওই বাড়িতে প্রবেশ আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। এত শোক ব্যথা নিয়েও কাজ করছি। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাদ্দাম হোসাইন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাইদুর রহমান হৃদয়, মেহেদী হাসান, জোবায়ের আহমেদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর