রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শত ইকোনমিক জোনে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান

মানিক মুনতাসির

শত ইকোনমিক জোনে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান

বেকারমুক্ত শিল্পনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯০টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি জোনের ভূমি, কলকারখানা, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণের  কাজ চলছে পুরোদমে। ১২টি ইকোনমিক জোনে দেশি-বিদেশি অন্তত ২১টি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উৎপাদনে রয়েছে। সেসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এসব জোনে অন্তত ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশ পুরোপুরি বেকারমুক্ত হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। তবে সরকারি খাতের জোনগুলোর তুলনায় বেসরকারি খাতের ইকোনমিক জোনগুলো এগিয়ে রয়েছে। বেসরকারি খাতের ২০টি জোন প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে ১০টি জোনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এমনকি সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ বর্তমানে উৎপাদনেও রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি খাতের এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগকারীদের জমি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তার সবই থাকবে এসব জোনে। ফলে  বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এসব জোন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন বেজার  নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। সূত্র জানায়, এসব জোনে বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে আসছে চীন, ভারত, জাপান, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর। বেজা এসব শিল্পাঞ্চলে ১৫ বছরের মধ্যে অন্তত ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করতে চায়। জোনগুলোয় গড়ে ওঠা শিল্প বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ২০৪১ সালের আগেই সারা দেশে শিল্পবিপ্লব ঘটবে বলে মনে করে বেজা। ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের ইকোনমিক জোনগুলোয় ২১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদনে রয়েছে। আরও ২৫টি দেশি-বিদেশি শিল্পগোষ্ঠী তাদের শিল্প-কারখানা নির্মাণ করছেন এসব জোনে। বাস্তবায়নাধীন ইকোনমিক জোনগুলোয় ১ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকাই বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব।

সূত্র জানায়, এসব জোনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বেজার ধারণা, শুধু মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরেই অন্তত ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে আগামী ১৫ বছরে অন্তত এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রপ্তানি আয় দাঁড়াবে ৪০ বিলিয়ন ডলারে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে আসবে এক অভাবনীয় পরিবর্তন। যা অন্তত ২ শতাংশ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়াবে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে বিবেচিত। যা বিভিন্ন সময় জাতিসংঘের শিল্প বাণিজ্য উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডও প্রকাশ করেছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণাটি সর্বপ্রথম প্রচলন দেখা যায় আয়ারল্যান্ডে ৫০ এর দশকের দিকে এবং এটি পর্যায়ক্রমে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন-২০১৯ এর তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩০টি দেশে ৫ হাজার ৪০০টির বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এসব জোনের মাধ্যমে অন্তত ১০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অর্থনৈতিক জোনের দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে চীনে আড়াই হাজারেরও বেশি, ফিলিপাইনে ৩১২টি, ভারতে ৩৭৩টি, শ্রীলঙ্কায় ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল রয়েছে। আর বাংলাদেশে বর্তমানে ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার পর্যায়ক্রমে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এর মধ্যে চীন ১৯৮০ সালে সেনজেন প্রদেশে প্রথম একটি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করে। এরপর একে একে আড়াই হাজারেরও বেশি ইকোনমিক জোন গড়ে তুলে মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে অর্থনৈতিক পরাশক্তির শীর্ষে চলে গেছে চীন। 

জান গেছে, এসব জোনের কাজ দ্রুত শেষ করতে ও শিল্প বিনিয়োগ বাড়াতে বেজা ১১ ধরনের সেবা দিচ্ছে অনলাইনে। এর মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প নিবন্ধন, ভিসা সহায়তা, ভিসা সুপারিশ, আমদানি অনুমোদন, রপ্তানি অনুমোদন, ওয়ার্ক পারমিট, লোকাল ক্রয় পারমিট, লোকাল বিক্রয় পারমিট ও স্যাম্পল এক্সপোর্ট পারমিট। এ ছাড়া স্টেকহোল্ডারদের জন্য ২০১৮ সাল থেকেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে বেজা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর