রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপি সুবিধায় নেই তবে দ্বিখণ্ডিতও হয়নি

মাহমুদ আজহার

বিএনপি সুবিধায় নেই তবে দ্বিখণ্ডিতও হয়নি

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ

বিএনপির বর্তমান অবস্থা ‘সুবিধাজনক’ নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘৪২ বছরে পা দেওয়া বিএনপি এত প্রতিকূল পরিবেশেও অক্ষত রয়েছে, দ্বিখ-িত হয়নি’-এটাই আশার কথা। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ৪২ বছরে পা দেওয়া দলটি এখন কোন পথে- এ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও নির্বাসিত। এ অবস্থায় অনেকেই মনে করেছিলেন, বিএনপি ভেঙে যাবে। টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং তারেক রহমান ও দলের স্থায়ী কমিটি শক্ত হাতে বিএনপিকে ধরে রেখেছে। তার মতে, বিএনপিকে একটি চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। অনেকেই কারাগারে। গুম, খুনও হয়েছেন অনেকে। তারপরও বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি অতটা দুর্বল নয়। বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া। একইভাবে কূটনৈতিক যোগাযোগও রাখা। দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে তাদের কাজ করতে হবে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, দেশে এখন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিনই নারী শিশু নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে। গুম-খুন থেমে নেই। নতুন ঝামেলা দেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। ঘুষ-দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। মনে হয় দেশে কোনো জবাবদিহিমূলক সরকার নেই। বিএনপির উচিত হবে, আগামী দিনে জনস্বার্থের বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।  বেগম খালেদা জিয়া ৫৭০ দিনেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে। তার মুক্তি আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আন্দোলন বলতে কি শুধু রাজপথে হাঙ্গামা করা। এটা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, দেশে এখন গণতান্ত্রিক সরকারের ছদ্মাবরণে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের রাজত্ব চলছে। তারা বিএনপিকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। মাঝে-মধ্যে দু-একটি কর্মসূচিতে পুলিশ অনুমতি দিলেও শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া সব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধেই মামলার খড়গ। মাঠে নামলেই গ্রেফতার, নির্যাতন এমনকি অনেকে রাজপথ থেকেই গুম হয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, বিএনপিকে আরও জনমত তৈরি করতে হবে। সবার সঙ্গেই দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে হবে। দলকেও গুছিয়ে নিতে হবে। তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী তা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তিতে ঈদের আগে বিএনপি বিভাগীয় কয়েকটি পর্যায়ে সমাবেশ করেছিল। জনমত বাড়াতে শুধু বিভাগীয় পর্যায়ে নয়, সাংগঠনিক সব জেলায় এ কর্মসূচি পালন করতে হবে। মানুষের সমস্যাগুলো বুঝতে হবে। তাদের পক্ষে থাকতে হবে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পাশে থাকতে হবে। বিএনপি সমর্থিত এই বুদ্ধিজীবী বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আস্থার সংকট কাটাতে হবে। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে হবে। নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে সব সময় তাদের খোঁজখবর রাখতে হবে। দলের কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় কিনা তার জবাবদিহিতাও থাকা চাই। শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে বিএনপিতে নেতৃত্বশূন্যতা আছে কিনা জানতে চাইলে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এটা সত্য যে শীর্ষ এক নেতা জেলে, আরেক নেতা নির্বাসিত। তবে এর মানে এটা নয় যে, বিএনপিতে নেতৃত্বশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডন থেকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সঙ্গে কথা বলছেন। স্থায়ী কমিটিও নিয়মিত মিটিং করে দলের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বিএনপি এখন মূলত যৌথ নেতৃত্বে চলছে। তবে বেগম জিয়ার অনুপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই দলে কিছুটা প্রভাব পড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর