সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

বাদপড়াদের বিদেশি ঘোষণা করা হবে না

আসামে ক্ষোভ-প্রতিবাদ

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রভীশ কুমার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যারা এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তাদের কাউকে বিদেশি বলে গণ্য করা হচ্ছে না। ‘ডিটেনশন’ ক্যাম্পে আটক করাও হবে না। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে এনআরসি নিয়ে বিভ্রান্তিকর রিপোর্টের কারণে পররাষ্ট্র    মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় এ বিবৃতি জারি করে। বিবৃতিতে এনআরসি গঠনের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাদপড়াদের কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে না।

মুখপাত্র বলেন, ১৯৮৫ সালে ভারত সরকার আসাম চুক্তি স্বাক্ষর করে, যাতে আসামের নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত সরকার, আসাম সরকার এবং আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ও আসাম গণসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে। সুপ্রিম কোর্ট ভারত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল ২০১৩ সালের মধ্যে এই চুক্তি রূপায়ণ করতে। এ কারণেই ২০১৫ সাল থেকে নাগরিক পরিচয় নির্দিষ্ট করে তালিকা প্রকাশ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মুখপাত্র দাবি করেন, এনআরসি প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া। এটা কোনো প্রশাসনিক নির্দেশে করা হয়নি। ফলে ভারত সরকার জোর করে এটা করছে বলা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট প্রতিটি পদক্ষেপ মনিটরিং করছে। তিনি এও বলেন, এনআরসি একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো- এটা বাড়ি বাড়ি ঘুরে করা হয়নি। বরং নাগরিকদের আবেদনের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। ফলে যে কোনো নাগরিক ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে আসামে নিয়মিতভাবে বসবাস করছেন প্রমাণ দিতে পারলেই তিনি নাগরিক হবেন। মুখপাত্র বলেন, এ প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। কেননা, আবেদনপত্রে বলা হয়নি ধর্মের ভিত্তিতে পরিচয় দিতে। যার নাম বাদ পড়েছে তিনি ১২০ দিনের মধ্যে বিদেশি চিহ্নিতকরণের ট্রাইব্যুনালে আবেদন করবেন। যদি তাতে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে আসামের হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারবেন। যার নাম বাদ পড়েছে তিনি যে সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার পেতেন তা-ই পেতে থাকবেন। ফলে এসব ব্যক্তিকে এখনই রাষ্ট্রহীন বলা যাবে না। ভারত সরকার প্রত্যেককে সব ধরনের সহযোগিতা করবে আইনি সুবিধা পাওয়ার জন্য। জেলা আইন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে এদের সহযোগিতা করার জন্য। বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য সুবিধা করে দেওয়া হবে। ট্রাইব্যুনাল বাড়িয়ে দু’শ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ব্লক স্তরে ট্রাইবুন্যাল হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত আইনের শাসনে বিশ্বাসী এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য সংবিধান মতে ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশকে ১৪-১৫ লাখ লোক ফেরত নিতে বলা হবে : আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় ১৯ লাখ লোক বাদ পড়ার একদিন পরেই রাজ্যটির অর্থমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘১৪-১৫ লাখ বিদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে তাদের এই ১৪-১৫ লাখ লোককে ফিরিয়ে নিতে বলা হবে।’ গতকাল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-কে  দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।

বাদ পড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতির স্বজনরাও : আসামে বিজেপি সরকারের তৈরি করা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়ারা গতকাল বিক্ষোভ করেছেন। দাবি জানিয়েছেন এনআরসির এ তালিকা বাতিলের। অন্যদিকে, বিরোধী দলের বিধায়ক ও ভারতের হয়ে যুদ্ধ করা সাবেক সেনা কর্মকর্তার পর খবর পাওয়া গেল শুধু তারা নন, এনআরসিতে স্থান হয়নি দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরউদ্দিন আলী আহমদের স্বজনদেরও।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শনিবার প্রকাশিত এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় নিজেদের নাম খুঁজে পাননি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরউদ্দিন আলী আহমদের স্বজনরা। সাবেক এ রাষ্ট্রপতির ভাই একরামুদ্দিন আলী আহমদের ছেলে জিয়াউদ্দিন গত বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত এনআরসির খসড়া তালিকায় নিজেদের নাম না দেখায় বিস্মিত হয়েছিলেন। এবার চূড়ান্ত তালিকায়ও নেই তাদের নাম। চূড়ান্ত তালিকায় নাম না দেখে হতবিহ্বল জিয়াউদ্দিন আলী আহমদ বলেন, আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরউদ্দিন আলী আহমদের ভাইপো। আমার নাম এনআরসিতে নেই। উত্তরাধিকার তথ্যে আমার বাবার নামও নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অধিকর্তা ছিলেন ফখরউদ্দিন আলী আহমদ। ভারতের এ পঞ্চম রাষ্ট্রপতির পরিবার বর্তমানে আসামের কামরূপ জেলার রঙ্গিয়ার বাসিন্দা। ভারতের মধ্যে আসামই একমাত্র রাজ্য যারা এনআরসি চালু করল। এ তালিকায় নাম উঠেছে মোট ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জনের। বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। এর মধ্যে ১১ লাখের মতো হিন্দু বাঙালি, ৬ লাখ মুসলিম বাঙালি এবং বাকিরা বিহারি, নেপালি, লেপচা প্রভৃতি। বাদ পড়া নাগরিকদের বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে প্রায় ১ হাজারের মতো বিদেশি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলা হবে।

কাউকে রাষ্ট্রহীন না করার আহ্বান জাতিসংঘের : ভারতের আসামে একজন ব্যক্তিকেও রাষ্ট্রহীন না করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকায় ১৯ লাখ মানুষ বাদ পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন। গতকাল জেনেভায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এক বিবৃতিতে একজনও যেন রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়ে, তা নিশ্চিত করতে বলেছে ভারতকে। বিবৃতিতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রানদি ১৯ লাখ লোক বাদ পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সর্বশেষ খবর