মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

৫০ টাকার ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে প্রাণ গেল মিলনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহজানপুরের গুলবাগ থেকে রবিবার রাতে মোটরসাইকেল চালককে গলা কেটে হত্যাকারী সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার বর্ণনা দেয় এভাবে- রাত ১২টার পর থেকে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে ঘোরাঘুরি করছিল নুর উদ্দিন সুমন। যাবে গুলিস্তান। আগ থেকেই সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন পাঠাও চালক। সুমন তাদের কাছে জানতে চান গুলিস্তান যাবেন কিনা। ওই পাঠাও চালকরা যেতে রাজি হন, তখন সুমনকে অ্যাপস থেকে রিকুয়েস্ট দিতে বলেন। সুমন জানান, তার মোবাইলে অ্যাপস নেই। তিনি চুক্তিতে যাবেন, বিনিময়ে ৫০ টাকা দেবেন। তার এ কথায় তখন কেউই রাজি হননি। আরও অপেক্ষা করতে থাকেন সুমন। ঘণ্টা দুয়েক পর সেখানে যাত্রী নিয়ে আসেন মিলন। ফ্লাইওভারে ওঠার ঢালে তাকে সিগন্যাল দিয়ে থামান সুমন। ৫০ টাকার চুক্তিতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে রাজি হন মিলন। সঙ্গে সঙ্গে তার মোটরসাইকেলে উঠে বসেন সুমন। ফ্লাইওভারের তৃতীয় তলায় উঠতেই মিলনকে মোটরসাইকেল থামাতে বলেন সুমন। কেন? তিনি সিগারেট খাবেন। মোটরসাইকেল থামাতেই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরায় সুমন। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দুজনে সিগারেট খায়। খাওয়া শেষে সুমন বলেন- ‘আমি মোটরসাইকেল চালাব, আপনি পেছনে বসেন’। এ সময় একটু হতচকিত হয়ে মিলন বলেন- ‘না না, আপনি কেন চালাবেন, আর আপনাকে আমি কেন চালাতে দেব?’ একথা বলেই মোটরসাইকেলে উঠে স্টার্ট দেন মিলন। কিছু বুঝে ওঠার আগে এন্টি কাটার দিয়ে মিলনের গলায় টান মারে সুমন। মিলনও আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। দুজনের ধস্তাধস্তিও চলে। সুযোগ বুঝে মিলনের গলায় উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে সুমন। পরে মিলনের মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সুমনের গ্রেফতার সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এরপর আদালতে ১৬৪ ধারায় সুমনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানান, সুমনকে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে নিহত মিলনের ব্যবহৃত একটি স্যামসাং জে-৫ মোবাইলফোন সেট, দুটি হেলমেট ও ডায়াং ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। আর ঘটনাস্থলে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ ছিল না, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীও ছিল না। এর মধ্যে আবার ঘটনাটি ঘটে রাতে। এমন ক্লুলেস ঘটনায় অপরাধীকে শনাক্ত করাটা ছিল খুবই কঠিন। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শাহজাহানপুরের গুলবাগ ৩২৬/বি নম্বর টিনশেডের বাসা থেকে অভিযুক্ত নুর উদ্দিন সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি উত্তরের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইলিয়াস শরীফ জানান, ওই ঘটনার পরদিন শাহজাহানপুর থানায় নিহত মিলনের স্ত্রী শিল্পী বেগম একটি মামলা করেন। এরপরই ছায়া তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর মালিবাগ ফ্লাইওভারে পাঠাও চালক মিলনকে ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ও মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যায় আরোহী সুমন। গুরুতর আহত অবস্থায় মিলনকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর