বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
রিফাত হত্যায় সুনাম কেন আসামি নয়, প্রশ্ন আসামিদের

জামিনে মুক্ত মিন্নি

বরগুনা প্রতিনিধি

জামিনে মুক্ত মিন্নি

জামিনে গতকাল মুক্তি পেয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি

বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ৫০ দিন কারাবাসের পর গতকাল বিকালে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নি মুক্তি পায়। কারাফটক থেকে বের হয়ে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাইঠা এলাকার বাড়ির দিকে রওনা হন আয়েশা। এ সময় জেল গেটে মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম ও মিন্নির পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে হাই কোর্টের দেওয়া মিন্নির জামিনসংক্রান্ত রায়ের অনুলিপি বরগুনার আদালতে পৌঁছায়। মিন্নির আইনজীবী বেলা ১টার দিকে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশসহ একটি বিবিধ মামলা করেন। আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে আদালতের বিচারক এম জাহিদ হাসান আয়েশার জামিন আদেশে সই করেন। এরপর আদালতের বার্তাবাহক দিয়ে তাৎক্ষণিক জামিন আদেশ বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে আয়েশার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরকে কারাগারের অভ্যন্তরে ডেকে পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সাড়ে ৪টার দিকে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে আসেন কিশোর।   আদালতের নির্দেশ থাকায় মিন্নি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বললেও মিন্নির বাবা কিশোর বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমার মেয়ে মুক্তি পেয়েছে। তিনি মিডিয়া এবং আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের সহযোগিতায় সত্য প্রকাশ হবে, আমার মেয়ে যে ষড়যন্ত্রের শিকার তা প্রমাণিত হবে। মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম মিন্নি মুক্তি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,  দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মিন্নি মুক্তি পাওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি। মিন্নি যে ষড়যন্ত্রের শিকার তা আইনের মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে। গত ২৯ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ মিন্নিকে দুই শর্তে স্থায়ী জামিন দেয়। শর্তগুলো হচ্ছে- মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না এবং সে তার বাবার জিম্মায় থাকবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির মুক্তি ঠেকাতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়ে সাড়া পায়নি।

সুনাম দেবনাথ নির্দেশদাতা : রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের আদালতে হাজিরের সময় তারা বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথকে জড়িয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছে। এ সময় সুনাম দেবনাথই নির্দেশদাতা ও তাদের লিডার হিসেবে দাবি করেছে আসামিরা। গতকাল এ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা ১৪ জন আসামিকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রথমে একটি প্রিজন ভ্যানে ১৩ জন পুরুষ আসামিকে আনা হয়। একই ভ্যানে পরে মিন্নিকে আদালতে আনে পুলিশ। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলার মূল নথি ফেরত না আসায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর কোনো আদেশ দেয়নি আদালত। অভিযোগপত্র গ্রহণের আদেশের জন্য আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছে আদালত। পুরুষ আসামিদের বহন করা প্রিজন ভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে আসামাত্রই ভিতর থেকে আসামিরা উচ্চৈঃস্বরে বলেন, সুনাম দেবনাথ কিন্তু আমাদের লিডার। এরপর আদালতের কার্যক্রম শেষে তাদের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আবার আসামিরা সাংবাদিকদের সামনে উচ্চৈঃস্বরে বলেন, ‘অন্যায়-অবিচার হচ্ছে। যে করছে, তারে দিছে সাত নাম্বার। মিন্নি কেন সাত নাম্বার? সুনাম দেবনাথ কেন আসামি নাই। সুনাম দেবনাথ নির্দেশদাতা, সে কেন আসামি নাই। বাদশাহ হত্যার কেন বিচার হয় নাই।’ প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। এরপর গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখান চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালে মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়। এরপর ১৬ জুলাই সকাল পৌনে ১০টার দিকে মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইনসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একই দিন রাত ৯টায় তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পরদিন মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এরপর কয়েক দফা আবেদন জানালেও নিম্ন আদালতে জামিন মেলেনি মিন্নির। পরে একই মামলায় জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবীরা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর