বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা শিবিরে দেশি-বিদেশি এনজিও কড়া নজরদারিতে

তিন বিষয় সামনে নিয়ে চলছে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গা শিবিরে বেশকিছু দেশি-বিদেশি এনজিওর ওপর কড়া নজরদারি চলছে। কয়েকটি এনজিওর কর্মকান্ডের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে এনজিও ব্যুরো। তিনটি বিষয় সামনে এনে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এই তদন্তকাজ চলবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এনজিও ব্যুরো সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তথা মিয়ানমারে না ফেরার জন্য তাদের ইন্ধন দেওয়াসহ তিনটি অভিযোগে এনজিওদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। পাশাপাশি, ক্যাম্পে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা- হচ্ছে কিনা তা নিয়েও গোয়েন্দারা কাজ করবেন। এ ছাড়া পুরনো একটি তালিকায় ৪১টি এনজিওর কর্মকান্ডে বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ আসায় সেগুলো খতিয়ে দেখার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে কাজ করার ক্ষেত্রে অন্যতম বৃহত্তর এনজিও মুক্তি’র কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদিকে গত ২২ আগস্ট দিনক্ষণ ঠিক করেও প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারা এবং রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের নানা ক্ষেত্রে পর্যালোচনাচলছে। অনেক ক্ষেত্রে নতুন করে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। এ কারণে বেশ কিছু দেশি-বিদেশি এনজিওর কার্যক্রম তিনটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। বিষয়গুলো হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফেরত যেতে না চাওয়ার পিছনে কোনো ইন্ধন দেওয়া হয়েছে কিনা, শরণার্থী শিবিরের ভিতরে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ করার ক্ষেত্রে অর্থ জোগান বা অন্যান্য সহযোগিতা করা হয়েছে কিনা এবং শরণার্থী শিবিরের ভিতর রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকা- চালানো হচ্ছে কিনা। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বলেন, পুরনো একটি তালিকায় ৪১টি এনজিওর বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গসহ নানা অপতৎপরতা চালানোর যে অভিযোগ এসেছিল, সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের আওতায় আপাতত ওই ৪১টি এনজিওই রয়েছে। তবে নতুন যে অভিযোগ ও পরিস্থিতি চলছে বা সর্বশেষ যে ইস্যুগুলো এসেছে তাতে সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে। এদিকে সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরে মুক্তি নামের একটি এনজিওর কর্মকা- বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই এনজিওটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ছয় হাজার নিড়ানি তৈরি করেছিল রোহিঙ্গাদের দেওয়ার জন্য। এসব যন্ত্র শিবিরে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার হতে পারে এমন অভিযোগে সরকার ওই এনজিওটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এর আগে বিভিন্ন কারণে আরও ছয়টি দেশীয় এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গত ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ করার ক্ষেত্রে কিছু এনজিও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ ওঠেছে। রোহিঙ্গা ঢলের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার দিন ছিল সেদিন। তাই শিবিরে রোহিঙ্গারা সমাবেশ করে আজগুবি সব দাবি জানিয়েছিল। আর এই সমাবেশে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্ব দেন তাদের কথিত নেতা মুহিবুুল্লাহ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থ্রি-জি ফোর-জি থাকবে সীমিত : কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা থ্রি-জি ও ফোর-জি বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি)।

বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্ব বিবেচনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনসুরক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গারা যাতে মোবাইল ফোন সুবিধা না পায়, তা নিশ্চিত করতে আগেও বলা হয়েছিল। কিন্তু কমিশন রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকারী কমিটি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে শিবিরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হারে সিম ব্যবহারের তথ্য পেয়েছে।

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম জানান, বারবার সতর্ক করার পরও কিছু এনজিও বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছে। গত বছর আমরা বলেছি যে, এনজিওরা মানবিক সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এর বাইরে তারা যেন কোনো কিছুতে না জড়ায়। এখন জানা যাচ্ছে, কিছু এনজিও তাদের ‘ডিসকারেজ’ করেছে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে। আমরা খতিয়ে দেখছি কারা এটা করেছে?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর