বেনাপোলে ২১ কোটি টাকা মূল্যের ৬৭ মণ ভায়াগ্রা পাউডার আটকের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের চোখ এখন বিসিএসআইআর নামক সায়েন্সল্যাবের রিপোর্টের দিকে। ভায়াগ্রা পাউডারের এত বড় চালান আমদানিকারকের অনুকূলে ছাড় দেওয়ার দাফতরিক সিদ্ধান্তে হতবাক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। একই সঙ্গে উদ্বিগ্ন বেনাপোল কাস্টমস এবং আমদানিকারক সমিতি। ভায়াগ্রা পাউডারের চালান খালাশ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ও শিল্প রসায়ন গবেষণাগার (সায়েন্সল্যাব) প্রতিষ্ঠানটির কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। বসে নেই বেনাপোল কাস্টমসের নিজস্ব টিমও। ইতিমধ্যে তারা দফায় দফায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং ভারতীয় কাস্টমসের সঙ্গে কথা বলে রহস্য উদঘাটনে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এ দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খাতায় ভায়াগ্রা পাউডারের এত বড় চালান আটকের নজির এর আগে আর নেই। সংস্থাটি তাদের গোয়েন্দা পূর্বাভাসে এ জাতীয় পণ্য পাচারের জন্য বেনাপোল বন্দরকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়ে বেনাপোল কাস্টমসকে আগেই সতর্ক করেছিল। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ভিন্ন ভিন্ন নামে ভায়াগ্রা পাউডারের দুটি চালান আটক করতে সক্ষম হলো কর্তৃপক্ষ। এর আগে কাস্টমসের একটি চৌকস টিম ২৫০ কেজি ওজনের ভায়াগ্রা পাউডারের একটি চালান আটক করে। সে ঘটনায় আমদানিকারকের নামে মামলা ও সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। সম্প্রতি আটক হওয়া দেশ জুড়ে আলোচিত চালানটির ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস জানায়, ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট নামে ভারত থেকে ২৫০০ কেজি ওজনের একটি পণ্য চালান আমদানি করে। পণ্য চালানটি যথারীতি পরীক্ষার জন্য বেনাপোল কাস্টমের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করা হলে রোমন স্পেক্টোমিটার মেশিনে ভায়াগ্রার উপস্থিতি নজরে আসে। কর্তৃপক্ষ অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বুয়েট এবং ঢাকার সায়েন্সল্যাবে পাঠায়। বুয়েট কর্তৃপক্ষ পণ্যটি পরীক্ষণে অক্ষমতা জানালেও সায়েন্সল্যাবের রিপোর্টটি আমদানিকারকের ঘোষণার সঙ্গে মিলে যায়। সায়েন্সল্যাবের রিপোর্ট মোতাবেক কাস্টমস পণ্য চালানটি স্বাভাবিক শুল্কায়নের নির্দেশ দেয়। চালানটি খালাস পর্যায়ে গোপন সংবাদে কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী চালানটি পুনরায় আটক করে সেটি পুনঃপরীক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঔষধ প্রশাসন তাদের রিপোর্টে চালানটির নমুনায় ৯৯.০৮ শতাংশ ভায়াগ্রার উপস্থিতি পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করে। আটকে যায় পণ্য চালানটি। বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পণ্য চালানটি আটকের পর সেটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাকে একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের তদবির করেন এবং হুমকি দেন। তিনি বলেন, সায়েন্সল্যাব কীভাবে পণ্যটি সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট উল্লেখ করে রিপোর্ট দিল তা অনুসন্ধান করা জরুরি। শুধু এটি নয়, সায়েন্সল্যাবে পাঠানো অধিকাংশ নমুনা আমদানিকারকের অনুকূলে রিপোর্ট আসে। প্রতিষ্ঠানটির একটি শাখা বেনাপোলে খোলার অনুরোধ জানিয়ে দেড় বছর আগে চিঠি দেওয়া হলেও কিছু কর্মকর্তার অসহযোগিতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। বেনাপোলের একজন আমদানিকারক ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতা আলহাজ নূরুজ্জামান সায়েন্সল্যাবের রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন, আর্থিক লেনদেন ছাড়া সায়েন্সল্যাব এ ধরনের মনগড়া রিপোর্ট দিতে পারে না। বেনাপোল বন্দরের সুনাম রক্ষার জন্য এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভার, পাউডার নাম দিয়ে মাদক, বিস্ফোরক জাতীয় পণ্য পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে।