বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংখ্যালঘু বলে নিজেদের খাটো করবেন না : প্রধানমন্ত্রী

কিছু লোক অনবরত আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংখ্যালঘু বলে নিজেদের খাটো করবেন না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংখ্যালঘু বলে নিজেদের খাটো করবেন না। এই দেশ আপনাদের, এই মাটি আপনাদের, এই জন্মভূমি আপনাদের। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় বলি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সেখানেও কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা রয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। আমি আপনাদের প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক না? তাহলে নিজেদের ছোট করে দেখবেন কেন ? তিনি বলেন, এই দেশে সব ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে। আমাদের সংবিধানের যে চার মূলনীতি সেখানেও তাই বলা আছে। আমাদের ধর্মেও তাই বলা হয়েছে, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। যে কারণে আমি যখন মসজিদভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নের চেষ্টা করলাম, তখন মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাও চালু করি। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। সেই সঙ্গে পুরোহিত-সেবায়েতের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি আমরা। ট্রাস্টের পাশাপাশি শারদীয় দুর্গা পূজায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আলাদা করে ২ কোটি টাকা দিয়ে আসছি। আমি আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা অনেকেই অর্থশালী আছেন নিজেরাও যদি ট্রাস্টে অনুদান দেন তাহলে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেই টাকা দিয়ে অসুস্থ-দরিদ্রদের সহায়তা করা যেতে পারে।

কিছু লোক অনবরত আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এখন সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা মূলত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেরই ক্ষতিসাধন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কিছু লোক আছে অনবরত আমাদের বিরুদ্ধে বাইরে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যারা আমাকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। এটা আপনাদের (ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ) চিহ্নিত করতে হবে।’ গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসস। দেশের উন্নয়নে তৈরি পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্য রপ্তানির জন্য এর আকর্ষণ বাড়াতে হলে আপনাদের পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের অংশগ্রহণে গত জুলাইয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত দূত সম্মেলনে তাঁর প্রদত্ত বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশি পণ্যের জন্য তাদেরকে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বলেছি।’ বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি রুবানা হকের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ ও সিদ্দিকুর রহমান এবং প্রথম জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মাদ আবদুস সালাম ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সল সামাদ অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইরানি মন্ত্রীর সাক্ষাৎ : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে শক্তিশালী ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে ওআইসি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে।’ সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ গতকাল প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তেঁজগাওয়ের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা বলেন। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিবদমান সংঘাতের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলিমরা তাদের নিজেদের মধ্যকার বিভাজনের জন্যই রক্তপাতের শিকার হচ্ছে। এর ফলে তৃতীয় পক্ষ বা দেশ এর সুবিধা ভোগ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন যে, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার বিবদমান সংঘাত দ্বিপাক্ষীয় বা বহুপাক্ষীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি ইরানি মন্ত্রীকে অবহিত করেন, তিনি নিজেই দুজন শিয়া বালিকাকে দত্তক নিয়েছেন, যারা ভয়াবহ নিমতলী অগ্নিকাে র শিকার হয়েছিল।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ গতকাল থেকে রাজধানীতে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী তৃতীয় (আইওআরএ) ব্লু ইকোনমি মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে যোগদানের জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আসেন। তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শুভেচ্ছাও প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছে দেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নকে দৃষ্টান্তমূলক অর্জন আখ্যায়িত করে জাভেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমি খুবই সন্তুষ্ট এবং এটা কেবল মাত্র আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ব্যক্তিগত নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।

সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি ফোরামেও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান দেখলেন প্রধানমন্ত্রী : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেত্রকোনায় ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যানের একটি পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখেছেন।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ প্রেজেন্টেশন দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।

২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ একর জমিতে এ বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২১ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এক হাজার আসনবিশিষ্ট চারটি হল থাকবে, যাতে দুই হাজার ছাত্র ও দুই হাজার ছাত্রী থাকতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০টি ডিপার্টমেন্টে ২০০ শিক্ষক ও ৩৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান, সিন্ডিকেট সদস্য ড. ফখরুল আলম, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. সুব্রত কুমার আদিত্য ও রেজিস্ট্রার কাজী নাসির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর