বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক

বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক

মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ছবি: সংগৃহীত

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। গতকাল সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের বাসভবনে এই বৈঠক হয়।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্রে জানা যায়, সংসদ ও গণতন্ত্রকে কার্যকর দেখতে চান কূটনীতিকরা। একই সঙ্গে তারা বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যদের নিয়মিত সংসদে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, দেশে এখন সংসদ ও গণতন্ত্র দুটোই অকার্যকর। বিনা ভোটে এখন সংসদ পরিচালিত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে না।

বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কূটনীতিকদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, কানাডার হাইকমিশনার, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত, পাকিস্তানের হাইকমিশনার, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে গত সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়ম, খালেদা জিয়ার মুক্তি, রোহিঙ্গা ও আসাম ইস্যু, সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিদেশি কূটনীতিকদের আরও বলা হয়, গণতন্ত্রের আড়ালে দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে। মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে, গণতন্ত্রের উন্নয়নে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়।

বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। গণতন্ত্রের আড়ালে স্বৈরতন্ত্র চলছে। দেশে একদলীয় শাসন চলছে। একজন কূটনীতিক ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বলেন, সংখ্যায় কম হলেও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নিয়মিত সংসদে উপস্থিত থেকে সংসদকে কার্যকর করতে হবে। সংসদে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিদের ভূমিকা কেমন তা-ও নেতাদের কাছে জানতে চান ওই কূটনীতিক। জবাবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতা বলেন, এ সংসদ অকার্যকর। বিনা ভোটের সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা হয় না। বিরোধী রাজনৈতিক দলই সেখানে মূল ইস্যু। তারপরও ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন প্রতিনিধি সংসদে যাচ্ছেন। যতটুকু সুযোগ পাচ্ছেন, তাতেই তারা বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের পর আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছিলাম। তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছিলেন, মাঝে মধ্যে আমাদের এ ধরনের বৈঠক হতে পারে। তারপর আর বসা হয়নি। এখন নতুন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন আসার পর বলেন, আমরা বসতে পারি কি না। তার কথা ধরে এ বৈঠক। সাধারণত বিএনপি নেতা ড. মঈন খান কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বৈঠকের আয়োজন করেন। জানা যায়, বিএনপি নেতারা তাদের বক্তব্যে বেগম জিয়ার কারাগারে থাকার বিষয়টি বারবার তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগ, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আইনের তোয়াক্কা না করে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। দেশের গণতন্ত্রের উন্নয়নে এটাও বাধা। তারা বেগম জিয়ার কারা মুক্তির জন্য সরকারকে চাপ দিতে কূটনীতিকদের প্রতি অনুরোধ জানান। তবে কূটনীতিকরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছি, কূটনীতিকরা শুনেছেন। তারা তেমন কিছু বলেন নাই।’ ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আ স ম আবদুর রব বলেন, সামাজিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর